বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। উপকূলীয় নদীগুলোর লবণাক্ততা ক্রমশ বেড়ে চলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় পানির উৎসগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়ায় পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে পানি। মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে উপকূলীয় ৭১০ কিলোমিটারের ১৪টি জেলার ৩ কোটি ১৯ লাখ ২ হাজার ৯৪৩ জন মানুষসহ জীববৈচিত্র্যে হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেড়ে গেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর পানির উৎসগুলো বিষাক্ত করে তুলেছে। মিঠা পানির বিভিন্ন নদীতে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। উপকূলের বলেশ্বর, মধুমতি, মাতামুহুরী, পায়রা, বিষখালী, সন্ধ্যা, কচা, সুগন্ধা, কীর্তনখোলা, তেঁতুলিয়া, আগুনমুখা, আন্ধারমানিক, নবগঙ্গা, চিত্রাসহ ৫৭টি খরস্রোতা নদীর পানি লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে গেছে। এসব খরস্রোতা নদীতে সমুদ্রে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে পূর্ণিমা-অমাবশ্যা এবং জোয়ার চলাকালীন সময়। সিইডি, সিসিএফডি, সিআরআইডি ও সিএমপিডি-এর তথ্যানুযায়ী, উপকূলের ৫৭টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির ৮২.১৪ শতাংশ ক্ষতিকারক এবং ৩৩.৫০ শতাংশ পানি অত্যন্ত ক্ষতিকারক। উপকূলীয় অঞ্চলে গত ছয় মাসে খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে লবণের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে শুকনো মৌসুমে বোরো ধান ও অন্যান্য রবিশস্যের সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ করতে হয়। পানির লবণাক্ততা ও ক্ষতিকারক উপাদান বিদ্যমান এলাকায় লবণ সহিষ্ণু ধান উৎপাদন না করলে ফসল ব্যাহত হবে। গবাদি পশুর ঘাস উৎপাদন হবে না। নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলো সরাসরি চাষাবাদের জমির সঙ্গে সংযুক্ত। উপকূলীয় এলাকায় খালগুলোতে চাষাবাদের সুবিধার্থে স্লুইস নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয় রয়্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুর রহমান খোকন বলেন, লবণাক্ত পানি খাল বা নালা থেকে জমিতে প্রবেশ, যাতে না করতে পারে সে জন্য যথাসময় স্লুইসের গেট বন্ধ এবং খোলা রাখা দরকার। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর প্রভাব ও লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় এলাকার জীববৈচিত্র্যেও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষার্থে সরকারের সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা দরকার। বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন মজুমদার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আর পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা তেন মং বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে লবণ পানি দেখা দিয়েছে ও পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের নদী ও পুকুরের দূষিত পানিতে ব্যবহার করায় ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপকূলীয় জনপদের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাটি, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ার ১৪ জেলার তিন কোটি ৩৯ লাখ দুই হাজার ৯৪৩ জন মানুষ এতে বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মৎস্য গবেষকদের মতে, পানি দূষিত হওয়ার কারণে সামুদ্রিক রিডা ও সিলন মাছের প্রজনন বিলুপ্ত হচ্ছে। এ ছাড়া গবাদি পশুসহ জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে।
Leave a Reply