বাউফল প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় শ্রমিক সংকটের কারণে মুগ ডাল ক্ষেতেই ঝড়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড তাপদাহের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে না চাওয়ায় ক্ষেতের ডাল ক্ষেতেই ঝরে যাচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে মুগডাল চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় ১৮ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে মুগ ডালের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল বারি-৩, বারি-৫ ও বারি-৬ প্রজাতির ১৭হাজার হেক্টর ও দেশি প্রজাতীর সোনাইমুগ খ্যাত প্রজাতীর একহাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। উপজেলার কয়েকটি এলাকায় মুগডাল ক্ষেতে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ডাল পেকে সবুজের ফাঁকে ফাঁকে কালো হয়ে গেছে। রৌদের তাপে ডালের ছড়া পেকে ফেটে গিয়ে ক্ষেতেই ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে। এসময় স্থানীয় কয়েক কৃষক জানান, রৌদ্রের প্রচন্ড তাপদাহের কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। একারণে চাষিরা পড়েছে বিপাকে। ডাল চাষি নাজিরপুর ইউনিয়নের শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘শ্রমিকদের অধিক মুজুরি দিয়েও ক্ষেত থেকে ডাল তোলানো যাচ্ছেনা। দুই দিন ধরে এলাকার কিছু নারী শ্রমিকদের সাথে চার ভাগের এক ভাগ ডাল বিনিময় চুক্তিতে শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে ডাল তুলছেন। তা আবার ভোর বেলা সূর্য ওঠার আগে থেকে শুরু করে সকাল সারে সাতটা আটটার মধ্যে শেষ করে। কারণ এরপড় যে রৌদ্রের তাপ শুরু হয়, সেই তাপের মধ্যে ক্ষেতে বসে থাকা সম্ভব হয় না।’ চরকালাইয়া গ্রামের চাষি বাদল মুন্সি বলেন, ‘আগে ক্ষেত থেকে ডাল তুলে দিলে নারী শ্রমিকদের দৈনিক আট-দশ ঘন্টা কাজে তিন কেজি ডাল দিলে শ্রমিকের অভাব হতো না। অথচ এ বছর প্রচন্ড রৌদ্রের তাপের কারনে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে তার সংগ্রহের চার ভাগের এক ভাগ ডাল। এতে করে চাষিদের লোকাসনের মুখে পড়তে হচ্ছে।’ দাসপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম মুন্সি বলেন, আমি এক একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-৬ প্রজাতীর পনেরো কেজি মুগডাল চাষ করেছি। ব্যায় হয়েছে প্রায় সারে সাত হাজার টাকা। গাছে যে ভাবে ফল এসেছিল তাতে প্রতি একরে ৮মন ডাল পাওয়া যেত। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতিমন ডালের দাম তিন হাজার চারশত টাকা। আমার মোট বিক্রি হতো সাতাশ হাজার টাকা। ক্ষেতে প্রথমে দেখা দেয় লেদা পোকার আক্রমন। পোকায় ক্ষেতের অনেক ডাল বিনষ্ট করে ফেললে ওষুধ ছিটিয়ে কিছু ডাল রক্ষা হয়। কিন্তু বর্তমানে শ্রমিক সংকটের কারনে ডাল পেকে ক্ষেতে ঝড়ে পড়ার উপক্রম। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের সাথে বিগত বছরের চেয়ে অধিক বিনিময় চুক্তি করে ক্ষেত থেকে ডাল তুলতে হচ্ছে।’ ক্ষেত থেকে ডাল তুলছেন এমন কয়েকজন নারী শ্রমিক আয়শা, সাহারা, ফেরদৌস ও মুক্তা বলেন, ‘রোদের এই তাপে কোন ভাবেই এক সাথে ত্রিশ মিনিট বসা যায় না। গত পরশু দিন তাদের সাথের আফসানা (৫৫) নামের এক নারী শ্রমিক ডাল তুলতে ক্ষেতে এসে ক্ষেতেই অচেতন হয়ে পড়েন। তাপড়েও তারা ভোরে সেহেরী খেয়ে নামাজ পড়ে এক আলো হলেই ক্ষেতে আসেন। সকালে রোদের তাপ বাড়লেই বাড়ি চলে যান।’ উপজেলা কৃষিকমৃকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান হিমু বলেন, ‘আসলে এটা একটা প্রকৃতিক দুর্যোগ বলতে পারেন। এ সময় কোন বৃষ্টি না হওয়ায় রৌদ্রৈর তাপদাহের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারপড়েও কৃষকদের বলা হয়েছে শ্রমিক মুজুরি যদি বেশি যায় তবুও ক্ষেত থেকে ডাল তুলে ফেলুন। তাতেও কৃষকদের লোকসান হবে না। কারন বিগত বছরের চেয়ে এ বছর ডালের দাম অনেক বেশি হবে।
Leave a Reply