বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গন্তব্যে ফিরতে যাত্রীরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ট্রলারে নয়তো স্পিডবোটে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী পার হচ্ছেন। এসব নৌপথে নিয়মিত ফেরি চলছে। কয়েকজন যাত্রী বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন যদি ফেরিতে উঠতে দিতেন, তাহলে তাঁরা উত্তাল নদী পার হতেন না। তাই বাধ্য হয়ে ট্রলারে, নয়তো স্পিডবোটে উঠছেন। বুধবার সাড়ে ৯টার দিকে ভোলার সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি ট্রলার ফেরিঘাটে ভেড়ানো। কয়েকজন যাত্রী অপেক্ষা করছেন ফেরিঘাটের পন্টুনে। বরিশালে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। ট্রলারে বরিশাল লাহারহাট যাওয়ার জন্য যাত্রীদের ডাকা হচ্ছে। একজন ২০০ টাকা। সাধারণ সময়ের ভাড়া ৫০ টাকা। বরিশাল থেকেও একের পর এক স্পিডবোট আসছে, যাচ্ছে। এসব স্পিডবোটে ৫-৬ জন যাত্রী। জনপ্রতি ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। যাত্রী ওঠা ট্রলারের মাঝি আ. হান্নান বলেন, ট্রলার চালানো নিষেধ। কোস্টগার্ড-পুলিশ এসে ঝামেলা করে। পেটের দায়ে চুরিচামারি করে চালাতে হয়। সবকিছু ম্যানেজ করে চলার জন্য ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভাই, সরকার লকডাউন দিয়েছে, কিন্তু কোম্পানির টার্গেট পূরণ করতে হচ্ছে। তাই ভোলা-বরিশাল করতে হচ্ছে।’ বরিশালের আরেক যাত্রী আ. সামাদ বলেন, ‘ঈদে বাড়ি যেতে হবে। ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করছে। তেঁতুলিয়া নদীতে ঢেউ কম। তাই ঝুঁকি নিলাম। হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। আল্লাহকে ভরসা করে কর্মস্থল থেকে বাড়িতে ফিরছি।’ ভেদুরিয়া-লাহারহাট ফেরিঘাটের স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোসলেহউদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা লকডাউনে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করেছি। তারপরও যদি কেউ চুরি করে চালান, সেটি তাঁর দায়। কোস্টগার্ড-পুলিশকে বলেছি, চালালে ধরে জেলে পুরবেন। আর আমরা সিরিয়াল ক্যানসেল করে দেব।’ মেঘনা নদীতে বুধবার দেখা যায়, কাচিয়া-মাঝের চর, নাছিরমাঝি-মদনপুরসহ কিছু অভ্যন্তরীণ নৌপথে এবং ইলিশা-মতিরহাট (লক্ষ্মীপুর), ইলিশা-মজুচৌধুরীরহাট (লক্ষ্মীপুর) নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার চলছে। ইলিশা ফেরিঘাটের পশ্চিমে চডারমাথা মাছঘাট থেকে ট্রলার ছাড়তে দেখা যায়। আরেকটি ট্রলারে যাত্রী তোলার সময় ছবি তুললে আবদুস শহিদ মাঝি যাত্রীদের নামিয়ে দেন এবং উঠতে নিষেধ করেন। এমন সময় একটি স্পিডবোটে যাত্রী নিয়ে আরও পশ্চিমে জোড়খালের দিকে যেতে দেখা গেছে। সেটি সম্ভবত লক্ষ্মীপুর থেকে এসেছে। এ সময় এক যাত্রী এসে বলেন, ‘ভাই, ডিস্ট্রার্ব করেন ক্যা। বাড়ি যাইত অইব। ফেরিতে মানুষ লইলে তো আমরা ট্রলার খুঁজি না।’ ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের আশপাশে পারাপারের অপেক্ষায় কিছু যাত্রী। ফেরি না পেয়ে ট্রলারে, নয়তো স্পিডবোটে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ট্রলারে ৩০০-৩৫০ টাকা আর স্পিডবোটে ৮০০-৯০০ টাকা দিয়ে যাচ্ছে। ফেরির ইজারাদার আক্তার হোসেন বলেন, ‘ইলিশা ফেরিঘাটে নৌ থানা ও পুলিশ তদন্তকেন্দ্র। আছে কোস্টগার্ডের টহল। তার মধ্যেই ট্রলারে অবাধে যাত্রী পার হচ্ছেন। টাকা দিলে আমিও ফেরিতে যাত্রী নিতে পারি, কিন্তু তাতে আমার পোষায় না।’ ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক পারভেজ খান বলেন, গত কয়েক দিন কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা ঘাটে খুব জমায়েত হচ্ছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ফেরিতে উঠতে দিচ্ছেন না। তবে যাত্রীরা ট্রলার-স্পিডবোটে যাচ্ছেন। কেন কীভাবে যাচ্ছেন, তা বিআইডব্লিউটিএ বলতে পারবে। এটা তাদের ব্যাপার। বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে এ সময় সি-সার্ভে সনদধারী নৌযান ছাড়া অন্য কোনো নৌযানে যাত্রী পারাপার, চলাচল নিষিদ্ধ। এরপরও মেঘনা–তেঁতুলিয়া নদীতে ছোট ছোট ট্রলারে যাত্রী পার হচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনকে বলা ছাড়া তাঁর কিছু করার নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করবে স্থানীয় প্রশাসন। ইলিশা নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজন চন্দ্র পাল বলেন, তাঁরা অভিযান চালানোর পরও চুরি করে ট্রলারে-স্পিডবোটে যাত্রী তোলা হচ্ছে। ভোলার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, তাঁরা অভিযান চালিয়ে ৩ জন স্পিডবোটচালককে আটক করে ২ হাজার টাকা করে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। আরও অভিযান চলবে।
Leave a Reply