দখিনের খবর ডেস্ক ॥ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচারে জড়িতদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা- ইন্টারপোল। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ হ্রাস পেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে এই অভিযান পরিচালনার কথা রয়েছে। এর আগে এ বছর জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইন্টারপোলের ইন্টিগ্রেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট টাস্কফোর্সের (আইবিএমটিএফ) প্রতিনিধি দল দেশের আন্তর্জাতিক ওই দুই বন্দর পরিদর্শন করবে। আইবিএমটিএফের সমন্বয়কের পক্ষ থেকে গত ২২ এপ্রিল ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা অফিসে (এনসিবি) একটি চিঠি পাঠানো হয়। এনসিবি বলছে, বাংলাদেশের বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক অপরাধীরা কীভাবে অন্য দেশে যাতায়াত করছে, মানবপাচার কিংবা অবৈধ পণ্য পরিবহন হচ্ছে সেসব বিষয় শনাক্তসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ হবে অভিযানের মূল কাজ। এ নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্য আলোচনা করবে। আইবিএমটিএফের চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগদানে বাংলাদেশ থেকে নারী-পুরুষরা সংঘাতময় অঞ্চলে গমন করছে। নারী-শিশু পাচারসহ পাচারকারীরা নিজ দেশে অবাধে যাতায়াত করছে। বৈশ্বিক ক্রসবর্ডারের সুবিধা নিয়ে চোরাচালানি এবং পাচারকারীরা কার্গো ফ্লাইটে অবৈধ পণ্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাচার এবং অবৈধ উপায়ে অভিবাসন প্রত্যাশীরা বিদেশ গমনে মরিয়া। বাংলাদেশকে উদ্দেশ করে ইন্টারপোলের চিঠিতে আরও বলা হয়, বিচারের মুখোমুখি না হয়ে অপরাধীরা বিভিন্ন দেশে পলায়ন করছে। সমন্বিত সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমেই কেবল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। এজন্য পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা বর্ডার পয়েন্টগুলোয় নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে চায় আইবিএমটিএফ। জাপান সরকার এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনে ইন্টারপোলের নেতৃত্বে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ফিলিপাইনে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রুদ্রিগো দুতেতে ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণা করেন। এরপর আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান, মানবপাচারসহ নানা অভিযোগে ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার এবং ফিলিপাইনে অভিযান চালায় ইন্টারপোল। ওই তিন দেশে অভিযানকালে পুলিশ এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২১ লাখেরও বেশি ডাটা সংগ্রহ করে ইন্টারপোল। এসব ডাটা যাচাই করে ১৪৮টি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি শনাক্ত করা হয়, যার মধ্যে ইন্টারপোল ঘোষিত ৪৯ জন আন্তর্জাতিক মোস্ট ওয়ানটেড অপরাধীর তথ্যও ছিল। এ সময় চারজন পলাতক অপরাধী ইন্টারপোলের হাতে গ্রেপ্তার হয়, যারা হত্যা ও প্রতারণায় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করেও বিভিন্ন অপরাধীরা যাতায়াতের তথ্য আছে ইন্টারপোলের কাছে। ইতোমধ্যে দুবাই-লিবিয়াভিত্তিক কয়েকজন মানবপাচারকারী গ্রেপ্তারের পর সেই তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, ইন্টারপোল মূলত ইমিগ্রেশন পয়েন্টে এসে ডাটা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে যে, কীভাবে অপরাধীরা যাতায়াত করে। অভিযানের আগে তাদের একটি কমিটি দুটি বন্দর পরিদর্শন করতে চাচ্ছে। এর আগে আমরা সংশ্লিষ্ট সবকটি সংস্থা হোম ওয়ার্ক করে মতামত গ্রহণ করব, কীভাবে তাদের সহায়তা করা যায়। এদিকে ইন্টারপোলের চিঠি অনুযায়ী, তারা প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বা অপরাধপ্রবণ এলাকা টার্গেট করে। যার মূল লক্ষ্য ‘ফরেন টেররিজম ফাইটার্স’রা (এফটিএফ) কীভাবে বাংলাদেশের স্থল, নৌ, আকাশপথের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াত করছে।
Leave a Reply