হিজলা প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকার হিসাব চাওয়াকে কেন্দ্র করে বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নের হরিনাথপুর বাজারে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় হরিণাথপুর বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকেই থানায় মামলা কিংবা লিখিত অভিযোগ দেয়নি। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, হরিণাথপুর বাজারের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জহির রায়হানের সঙ্গে মেম্বরপ্রার্থী মোক্তার হোসেন খানের বাকবিতণ্ডা হয়। জহির হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লতিফ খানের অনুসারী এবং মোক্তার স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমানের অনুসারী। মোক্তার মেম্বর জহিরকে উদ্দেশ করে বলেন, এবার তালিকায় নাম থাকলেও অনেক গরীব এবং অসহায় মানুষ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের নগদ সহায়তা পাননি। এ কথা বলে মোক্তার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের অর্থের হিসাব চান জহিরের কাছে। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি, বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মারামারিতে তা রূপ নেয়। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান লতিফ খানের কর্মী-সমর্থকরা জহির রায়হানের পক্ষে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমানের কর্মী সমর্থকরা মোক্তারের পক্ষ নিয়ে তারাও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। রাত ২টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। মোক্তার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের টাকা নিয়ে অনিয়ম করায় বর্তমান মেম্বর ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জহির রায়হানের কাছে হিসাব চাই। এতে জহির ক্ষুব্ধ হয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। আমি ও আমার সমর্থকরা পাল্টা হামলা চালালে সংঘর্ষ বাধে। হরিণাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রোববার রাত সাড়ে ৮টায় হরিণাথপুর বাজারে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তৌফিকুরের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তার সমর্থকরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ বাধে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকু রহমান বলছেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুই মেম্বর প্রার্থী মোক্তার হোসেন ও জহির রায়হানের মধ্যে বাকবিতণ্ডার জের ধরে সংঘর্ষ হয়। লতিফ খান বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছেন। তার নেতৃত্বে কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি। হিজলা থানা পুলিশের ওসি অসীম কুমার সিকদার জানান, ওই রাতে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনার যাতে ফের না ঘটে, এ জন্য হরিণাথপুর বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষে ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে হরিনাথপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আবারও সংঘর্ষের আশঙ্কায় সোমবার বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান খোলেননি। দুগ্রুপ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে থাকায় তারা আতঙ্কে ভুগছেন।’
Leave a Reply