দখিনের খবর ডেস্ক ॥ কথা ছিল চলতি বছরের জুনেই চালু হবে পায়রা সেতু। তৃতীয় দফা সময় বৃদ্ধির আবেদন করার সময় তেমনটাই বলেছিল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লং জিয়াং রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন। ২০২০ সালের জুনে তৃতীয়বারের মতো সময় বৃদ্ধির আবেদনে চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও সেতুটি যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করতে পারেনি। উপরন্তু আরও ৮ মাস অর্থাৎ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে তারা। সড়ক ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, এতটা সময় দেওয়া হবে না ঠিকাদারকে। যেটুকু কাজ বাকি আছে তাতে বড়জোর অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া যেতে পারে। তবে তার আগেই জুলাই কিংবা আগস্টের মধ্যে সেতু খুলে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে চাপ দিচ্ছি আমরা। আশা করছি, সেতু খুলে দিয়েও বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করা যাবে। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা এবং পায়রা বন্দরসহ পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সঙ্গে সড়কপথে যাতায়াতে আগে পার হতে হতো ৬টি ফেরি। বরিশাল থেকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার দূরত্ব মাত্র ১০৬ কিলোমিটার হলেও এই ৬টি ফেরির জন্য বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫টি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হলেও বাকি রয়ে যায় বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার সংযোগ স্থলে থাকা পায়রা নদী। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ২০১৬ সালে শুরু হয় এখানে সেতুর নির্মাণ কাজ। শুরুতেই সিদ্ধান্ত হয়, পর্যটন এলাকায় হওয়ায় একটু ভিন্ন কাঠামোতে নির্মাণ করা হবে এই সেতু। অনেকটা ঝুলন্ত সেতুর আদলে এক্সট্রা ডোস্ট ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও সেতু বিভাগ। চট্টগ্রামের কর্নফুলি নদীর পর এটাই দেশের দ্বিতীয় এক্সট্রা ডোস্ট সেতু। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে ১১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নিয়ে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লং জিয়াং রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন। কথা ছিল, ২০১৯ সালের এপ্রিলে শেষ হবে সেতু নির্মাণ। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কথা বলে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া এক আবেদনে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় চায় ঠিকাদার। সময় দেওয়া হলেও দ্বিতীয় মেয়াদে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় তারা। তৃতীয় দফায় দেওয়া সময়ের আবেদনে নানা কারণে ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে বরাদ্দ বাড়ানো এবং ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তৃতীয়বারের মতো সময় চায় তারা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে সময় বাড়ানো হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। এরই মধ্যে সেতুর নদীর অংশের কাজ মোটামুটি শেষ হলেও বাকি রয়ে যায় অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং টোল ঘর নির্মাণসহ আরও নানা কাজ। যদিও এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের প্রশ্ন এরই মধ্যে টোলের হার নির্ধারণ করেছে সরকার। জুনে সেতু চালু হবে-এমন ভাবনা থেকেই এসব কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন চতুর্থবারের মতো ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করেছে তারা। বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আশীষ মুখার্জি বলেন, ‘সেতুর নির্মাণ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তবে এটাও ঠিক যে, ঘোষিত শিডিউল অনুযায়ী জুনেই সেতু চালু করতে পারছি না। কিছু কাজ বাকি আছে। এই যেমন অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং টোলঘরের নির্মাণ। তারপরও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি জুলাইয়ে বা আগস্টের শুরুর দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দিতে। যেটুকু কাজ বাকি আছে তা শেষ হলেই মন্ত্রণালয়কে জানাব। এরপর প্রধানমন্ত্রী যেদিন সময় দেবেন, সেদিনই খুলে দেওয়া হবে পায়রা সেতু।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সময় বৃদ্ধির আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু জুনে সব কাজ শেষ হচ্ছে না, তাই তারা সময় চেয়েছে। তবে আমরা মনে করি, কাজ যা বাকি আছে তাতে অক্টোবরের বেশি লাগবে না। তাই তাদেরকে সর্বোচ্চ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে।’
Leave a Reply