স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথিত ছেলে দাবিদার বাউফলে সেই সুধীর নট্ট ওরফে সুধীর নন্দীর অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ভূক্তভোগিরা। নির্যাতিতদের পক্ষে দাশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শিব রতন নামের এক ব্যক্তি শনিবার বেলা ১১টায় বাউফল প্রেসক্লাবে এ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি সুধির নট্রর আগ্রাসী ছোবল থেকে হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিব রতন উল্লেখ করেন, বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের দাসপাড়া ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত সুখরঞ্জন নট্টর পুত্র সুধীর নট্ট। তিনি অত্যান্ত নিন্ম আয়ের মানুষ ছিলেন। একসময় তিনি দিনমজুর ও শাপলা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। সুধীর নট্ট বাউফল পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাবু সত্যরঞ্জন সাহার বাসায় কাজ করতেন এবং সত্যরঞ্জন সাহার বৈশাখী সিনেমা হলের মাইক প্রচার করতেন। একসময় সুচতুর সুধীর নট্র সত্যরঞ্জন সাহাকে বিতারিত করে ওই সিনেমা হলটি নিজের কব্জায় নিয়ে নেয়। তার ছোট ভাই সুশিল নট্ট সত্যরঞ্জন সাহার নুরিয়া মার্কেটের জুয়েলারির দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পরবর্তীতে সুধীর জুয়েলারি দোকনটিও তার কব্জায় নিয়ে নেয়। আর এ সবই সুধীর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙ্গিয়ে তার ছেলে পরিচয়ে। তাকে সবাই প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবেই জানে। সুধীর নট্টোর সাথে ঘটনাচক্রে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার পরিচয় হয়। সেই সুবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ১০-১২ বছর আগে সুধীর নট্টোর সাক্ষাৎ হয়। এরপর থেকেই নিজেকে সুধীর নট্ট প্রধানমন্ত্রীর ছেলে পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীতে স্ব-পরিবারেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে স্ব-পরিবারে ছবি তোলেন। ওই তোলা ছবি তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় টানিয়ে রাখেন। এমনকি সুধীর নন্দী নামে তার ফেসবুক প্রোফাইলে ওই ছবি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। এভাবে নানা কৌশলে সুধীর রাতারাতি কোটিপতি হয়ে বনে যান। তিনি অশিক্ষিত হলেও খুবই চতুর প্রকৃতির মানুষ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তার গ্রামের খরকুটোর ঘরটি ১০-১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাকা করেছেন। বাউফল পৌর শহরের প্রান কেন্দ্রের ৭নং ওয়ার্ডের সাহা পাড়ায় জমি ক্রয় করে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দ্বিতল সুরম্য ভবন নির্মান করেছেন। ঐ ভবনের পাশে আরও একটি পাকা ভবনের নির্মান কাজ চলছে। অগ্রণী ব্যাংক সহ বিভিন্ন ব্যাংকে তার রয়েছে বিপুল পরিমান টাকা। সাংবাদিক সম্মেলনে শিব রতন তার লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, সুধীর নট্ট ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। দুই সন্তানের জনক। তার স্ত্রী সুমা নট্ট দাসপাড়া গ্রামের ঠিকানায় প্রাইমারী স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী নেন। তিনি হোসনাবাদ সরকারি প্রাইমারী স্কুলে অল্প কয়েকমাস চাকুরী করেন। এরপর সম্পূর্ণ বিধি বর্হিভূত ভাবে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে ওই স্কুল থেকে পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের নূরিয়া সরকারি প্রাইমারী স্কুলে বদলী হয়ে আসেন। সেখানে কিছুদিন চাকুরী করার পর সব বিধি লঙ্গন করে পৌর শহরের প্রানকেন্দ্রে বাউফল আদর্শ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে বদলি হয়ে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলের পরিচয়ে প্রভাবের কারনে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। সুধীর নট্ট তার বাড়ির লোকজনসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক পরিবারকে জিম্মী করে রেখেছেন। দাসপাড়া গ্রামের সুনিল নট্টোর সাথে সুধীর নট্ট জমি জমা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি করে। তাদের বসত ঘরটি ভেঙ্গে পরলেও সুধীর নট্টোর প্রধানমন্ত্রীর ছেলে পরিচয় প্রভাব দেখিয়ে তা মেরামত করতে দিচ্ছেন না। তাদের জায়গার গাছ গাছালি কাটতে দিচ্ছে না। কথায় কথায় থানা থেকে পুলিশ ডেকে এনে তাদেরকে হয়রানী করেন। তার হাতে পৌর শহরের ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রীধর ঠাকুর, নারায়ন ঠাকুর, সুশান্ত ঠাকুর, ঝন্টু ঠাকুর জিম্মি হয়ে রয়েছেন। তাদের জায়গা দিয়ে সুধীরকে রাস্তা না দেওয়ায় সুধীর তাদেরকে শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছে। সুধীর ঝন্টু ঠাকুরের স্ত্রীকে মারধর করেছেন। দাসপাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে ঘর প্রতি বাবদ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। সুধির নট্র তার শ্বশুরের জমি বিক্রির ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর ওই টাকার শোকে তিনি বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। কথিত আছে যে, সুধীর নট্ট বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছ মনোনয়ন দেয়ার নামে মোটা অংকের বানিজ্যে করে আসছেন। তার কাছে নাকি প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও বাস ভবনে যাওয়ার স্পেশাল পাস (কার্ড) আছে। এ কারণে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও তাকে সমিহ করে। সুধীর নট্টোর এসব অপকর্মের কারণে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। একারণে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নেতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হয়েছে। যা সাংবাদিকদেরও অজানা নয়। তিনি সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে সুধির নট্রর এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে শিব রতনের বৃদ্ধ মা গীতা রানী সুধিরের অপর্কম ও অত্যাচারের কথা তুলে ধরতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তিনি বলেন, সুধির নট্রর ভয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। সুধিরের কথা নাকি দেশের বড় বড় লোকজন উঠবস করে। তার ছেলের মুখে ভাত অনুষ্ঠানে নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার পাঠিয়েছেন এমন কথা বলে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও তাকে সমিহ করে। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নির্যাতিত শিব রতনের বাবা সুনিল চন্দ্র, মা গীতা রানী, চাচা বিমল নট্র, অমল নট্র, চাচি আরতী রানী, পুতুল রানী, শ্রীধর ঠাকুর ও মোঃ কবির হোসেন হাওলাদার।
Leave a Reply