দখিনের খবর ডেস্ক ॥ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত এপ্রিল থেকে দেশে চলছে বিধিনিষেধ। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার গণপরিবহন। এর মধ্যেই পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই রাজধানী থেকে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে গেছেন লাখ লাখ মানুষ। ঈদের পর এবার নানা উপায়ে ঢাকায় ফিরছেন নগরবাসী। এই ঈদযাত্রায় সড়কে ২৩৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩১৪ জন। শনিবার বিকালে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়। গত ৭ থেকে ২০ মে পর্যন্ত মোট ১৪ দিনের দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। দেশের সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে সংস্থাটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার দিক দিয়ে সবার উপরে ঢাকা বিভাগ, এরপরে যথাক্রমে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, ঈদ উপলক্ষে গত ৭ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৩১৪ জন এবং আহত ২৯১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৪৩ জন, শিশু ২৮। এসব দূর্ঘটার মধ্যে ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এতে নিহত হন ১৩৪ জন, যা মোট নিহতের ৪২.৬৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫০.৬২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৭৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৪.২০ শতাংশ। একই সময়ে বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৩৭ জন। ঈদযাত্রায় পুলিশ, র্যাব, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ছাত্র ও সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার পেছনে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১০ সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। এছাড়াও ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ যাত্রী, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায়যাত্রী ২৯ জন, থ্রি-হুইলার (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-টেম্পু) ৩৩ জন, নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি যাত্রী ১৬ জন, প্যাডেল রিকশা, বাইসাইকেলে দুর্ঘটনায়ও প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। দুর্ঘটনার ধরন: দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৪৪টি (১৮.৪১%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৯৫টি (৩৯.৭৪%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭৬টি (৩১.৭৯%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ১৯টি (৭.৯৪%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং পাঁচটি (২.০৯%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা: দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪৩১টি। (ট্রাক ৬২, বাস ২১, কাভার্ডভ্যান ১২, পিকআপ ২৩, ট্রলি ৭, ট্রাক্টর ৯, মাইক্রোবাস ২৪, প্রাইভেটকার ১৬, অ্যাম্বুলেন্স ১, জিপ ১, র্যাবের পিকআপ ১, মোটরসাইকেল ১২৬, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-টেম্পু ৮৮, নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি ২৯ এবং প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান, বাই-সাইকেল ১১টি। গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে-পরে মোট ১২ দিনে ১২৮টি দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছিল। গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছিল ১২.২৫ জন। আর এবারের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে মোট ১৪ দিনে নিহত হয়েছে ৩১৪ জন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ২২.৪২ জন। এই হিসেবে প্রাণহানি বেড়েছে ৮৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ২৬৭ জন। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করে যাওয়া এই সংস্থাটি।
Leave a Reply