নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের সাহেবেরহাটের কুন্দিয়ালপাড়া নামক এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কুন্দিয়ালপাড়া মৌজার ৪৩৪ নম্বর দাগের চান্দিনাভিটির ৩ শতাংশ জমিতে অনেকটা গোপনীয়ভাবে এক ব্যক্তি ভবন নির্মাণ শুরু করলে বিষয়টি জেলা প্রশাসন কোন এক মাধ্যম নিশ্চিত হয়। এবং সরকারি জমিতে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়। সেই সাথে ভবন মালিককে তলবসহ সরকারি জমিতে কারা বসবাস করছে এবং কাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে, জানতে তদন্তের নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিব আহম্মেদ জানান, সাহেবেরহাটের কুন্দিয়ালপাড়ার চান্দিনাভিটির জমিতে হারুন হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি ভবন নির্মাণ করছেন, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে কাগজপত্রসহ তলব করা হয়েছিল। এরপূর্বে তাকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি কাগজপত্রসহ আসলে তা যাচাই-বাছাই করে কাজ বন্ধ রাখাসহ জমিতে কারা রয়েছেন, জানতে তদন্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা পরবর্তী দায়িত্ব পালন করবেন এবং তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, সাহেবেরহাট বাজারের কুন্দিয়ালপাড়া মৌজার ৪২২ নম্বর দাগে ১৫ ও ৪৩৪ দাগে ৩৬ শতাংশ জমি জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন রয়েছে। এই জমির কিছু অংশ ২০১৬ সালে হারুন হাওলাদারসহ ৮ জনকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠা পরিচালনার শর্তে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি খবর আসে জমির কিছু অংশে হারুন হাওলাদার বহুতল ভবন করছেন। আর বাকি অংশ অর্থের বিনিয়ে কয়েক দফা হাত বদল হয়েছে। জেলা প্রশাসনের শর্ত ভঙ্গ করে সরকারি জমি হাত বদল ও বহুতল ভবন নির্মাণ বেআইনি হওয়ায় কাগজপত্রসহ হারুন হাওলাদারকে তলব করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে কাগজপত্রসহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিব আহম্মেদ ডেকেছেন। এবং কাগজপত্র দেখে ভবন নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত দেন। এর আগে ভূমি কর্মকর্তার নির্দেশে চাঁদপুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসার হাফিজুর রহমান ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। হাফিজুর রহমান জানান, হারুন হাওলাদারের ছেলে রিপন হাওলাদার সরকারি জমিতে অবৈধ ভবন করছিলেন। সরেজমিন গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে সাহেবেরহাটের ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, রিপন ২০১৬ সালে তার বাবা হারুন হাওলাদার, নানা ওয়াজেদ আলী এবং খালু হিমু মীরাসহ ৮ জনের নামে প্রায় ৪ শতাংশ জমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার শর্তে প্লট আকারে ইজারা নেয়। পরবর্তীতে সেখানে সে একটি টিনের ঘর তুলে বসবাস করাসহ বাবা হারুন হাওলাদারের জমি স্থানীয় এক যুবদল নেতার কাছে এবং নানা ওয়াজেদ আলীর জমি যুবদল নেতার ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে পাকা ভবন তুলে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকারি এই জমিতে পাকা ভবন করার কোন প্রকার বৈধতা নেই বলে জানা গেছে। ইজারাদারদের একজন আকতারুজ্জামান বাচ্চু অভিযোগ করেন, হারুনের ছেলে রিপন তার বাবা ও নানার জমি অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছে। এখন যেখানে বসবাস করাসহ ভবন নির্মাণ করছে, সেটি তার নামে বরাদ্দ থাকলেও রিপন জবরদস্তি কাজ শুরু করেছে। বাচ্চু জানান, খবর পেয়ে তিনি লোকজন নিয়ে গিয়ে বাঁধা দেন এবং জায়গা বুঝিয়ে না দিয়ে ঘর তুলতে নিষেধ করেন। বিষয়টি ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন সাহেবেরহাটের এই ব্যবসায়ী। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি জমি ইজারা নিয়ে কেউ ভবন নির্মাণ বা বিক্রি করার অধিকার রাখে না। সাহেবেরহাটের ক্ষেত্রে সেটি হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া বিষয়টি এখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেখছেন বলেও জানান ইউএনও। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজিব আহম্মেদের হাতে ফের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলা হলেও তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ইজারা বাতিল করা হবে। এবং নির্মাণাধীন ভবনটিও গুড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’
Leave a Reply