পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে গত ২ দিন ধরে পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। ভরা পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার (২৭মে) পিরোজপুরের কঁচা, বলেশ্বর, কালিগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে জানান, পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান। এদিকে বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পিরোজপুরে দমকা হাওয়ার মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেলার মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, নাজিরপুর ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে এসব অঞ্চলের কাঁচা-পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি মাছের ঘের, ধান, রবি শষ্য ও পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলায় আবাদকৃত ১৬৭ হেক্টর আউষ ধানের বীজতলা, ৭ হাজার ৩১৮ হেক্টর আবাদি জমি, ১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত, ১৪১ হেক্টর জমির পানের বরজসহ ২১২ হেক্টর বিভিন্ন রবি শষ্যের ক্ষেত সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক চিন্ময় রায় জানান, ইয়াসের প্রভাবে আরও ১/২ দিন জোয়ারের পানি থাকলে ডুবে যাওয়া এ সকল সবজি ক্ষেতের এবং ধানের বীজতলা ও চারা সম্পুর্ণ পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এ বারী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেলার মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, নাজিরপুর ও সদর উপজেলার নিম্নঞ্চল জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৫৯৬ হেক্টর জলাশয়ের ২ হাজার ১৫৭টি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষিদের। পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে মঠবাড়িয়ার মাঝেরচর, বড় মাছুয়া, পিরোজপুর সদর উপজেলার হুলারহাট এলাকাসহ ইন্দুরকানী ও ভান্ডারিয়া উপজেলার কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভান্ডারিয়ার তেলিখালীতে বেড়িবাঁধের বড় একটি অংশ পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। যার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার মত। ভাঙ্গন কবলীত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধে কাজ করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন। পিরোজপুর ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোজাহারুল হক জানান, নদী তীরবর্তী ৩/৪ স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৫ হাজার পরিবার প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ১৫ হাজার ৫শ’ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে সারা দেশের ন্যায় পিরোজপুরেও কম-বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরী করা হচ্ছে।
Leave a Reply