স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানারীপাড়ার ইলুহার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার পদপ্রার্থী মিজানুর রহমান বেপারীর (৫০) মৃত্যু রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দৃষ্টান্ততমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মলুহার গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় মানুষের ঢল নামে। দাফন শেষে এলাকার শত শত মানুষ মিজানুর রহমানের নির্বাচনী পোষ্টার বুকে নিয়ে মানববন্ধন করে তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এসময় এলাকাবাসীর দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইলুহার ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইলুহার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম কালাম,ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আমিনুল ইসলাম সোহেল,সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম,উদয়কাঠি ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান জাকির হোসেন প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ৩ জুন বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর হেলথ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৪ জুন শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে ওই দিন রাত সাড়ে ১১টায় তার মরদেহ বানারীপাড়ার মলুহার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে লাশ পৌঁছার পরে তার ৬ বছর বয়সি শিশু কন্যা মারিয়াসহ স্বজন,শুভার্থী ও প্রতিবেশীদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। জানা গেছে, মিজানুর রহমানের ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ফল ও কাঁচামালের আড়ৎ রয়েছে। ২ জুন বুধবার বিকাল ৫টার দিকে তিনি ও তার ভাই সেলিম আড়তে বসে কথা বলছিলেন। এমন সময় মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে কল এলে তিনি আড়তে সেলিমকে রেখে বাহিরে বেড়িয়ে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাঁচপুর ব্রিজের অদূরে পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় তারা মিজানের মুঠোফোনে তার ভাই সেলিমের নম্বর পেয়ে তাকে বিষয়টি জানান। পরে সেলিমসহ স্বজনরা সেখান থেকে মিজানকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরিশেষে গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে পাকস্থলী ওয়াশের পরে তার অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু করোনা রোগীর কারনে আইসিইউতে সুযোগ না পাওয়ায় সেখান থেকে মোহাম্মদপুরের হেলথ কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ৩ জুন সকাল সোয়া ৮টায় মিজানের মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মিজানের ছোট ভাই সেলিম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ফলে সোনারগাঁও থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এদিকে স্বজনদের ধারণা নির্বাচনকে সামনে রেখে সুপরিকল্পিতভাবে তাকে মুঠোফোনে ঢেকে নিয়ে বিষ প্রয়োগ ও মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। মিজানুর রহমান এর আগেও দু’বার ইউপি মেম্বার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও জোরপূর্বক তার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে স্বজন ও স্থানীয়রা জানান। এবারও তিনি জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিপন কুমার সাহা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান- মেম্বার প্রার্থী মিজানুর রহমান বেপারীর মৃত্যুর ফলে ওই ওয়ার্ডে ২১ জুন নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হবে। উল্লেখ্য, মিজানুর রহমান বেপারী বানারীপাড়ার ইলুহার ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের (মলুহার গ্রাম) মেম্বার পদপ্রার্থী ছিলেন। তার নির্বাচনী প্রতিক ছিল ভ্যানগাড়ি। করোনার লকডাউনের কারনে গত ১১ এপ্রিলের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় তিনি তার কর্মস্থল ঢাকায় ফিরে যান। ২১ জুন পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরে ২ জুন তিনি এলাকায় ফোন করে স্বজন ও শুভার্থীদের জানান ৩ জুন এলাকায় ফিরে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। কিন্তু মৃত্যুর অমোঘ নিয়তি সেই ৩ জুনই তাকে না ফেরার দেশের যাত্রী করে। ফলে জীবিত নয়, লাশ হয়ে কফিনে ৪ জুন রাতে তিনি নিথর দেহে এলাকায় ফেরেন।
Leave a Reply