নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘স্ট্রিট ফুড’। বাংলায় বললে ‘রাস্তার খাবার’! নানা অভিযোগ উপেক্ষা করে এই রাস্তার খাবারই বরিশাল নগরীতে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । রাস্তার পাশে ঝকঝকে চকচকে দৃষ্টিনন্দন একেকটি ছোট্ট চাকা-ঘর হয়ে উঠছে মুখরোচক খাবারের কেন্দ্র। তুলনামূলক কম দামে ‘স্ট্রিট ফুড’ খেতে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ভিড় জমে। কাঁচঘেরা ছোট্ট ‘স্ট্রিট ফুড’ দোকানে হাতে গ্লাভস পরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবেই পরিবেশন করা হয় খাবার। যে কোনো রেস্টুরেন্ট থেকে অনেক কম দামে চোখের সামনে তৈরি করা মজাদার হরেক রকম খাবার মন কাড়ে নগরবাসীর। অপরদিকে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ইদানিং এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে অনেকেই।
স্ট্রিট ফুডের নাম জিজ্ঞাসা করলে আমরা পিঁয়াজু, মুড়ি, চানাচুর মাখাতেই আটকে যাই। অথচ এই নগরীতে কত পদের খাবার শুধু রাস্তায় বিক্রি হয়, তার ইয়াত্তা নেই। শরবত বিক্রি হয় শতাধিক রকমের। চিকেন ফ্রাই থেকে শুরু করে পিৎজা পর্যন্ত সড়কপথেই বিক্রি হচ্ছে। বরিশাল নগরীর বাসিন্দাদের অন্যতম পছন্দের ভ্রমণের স্থান ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর পাড়। এই এলাকায় গড়ে উঠেছে হরেক রকম খাবারের মেলা। স্ট্রিট ফুড কিংবা ছোট্ট পরিসরে খাবারের দোকান নিয়ে বসেছেন অনেকে। হালিম, মুড়ি ভর্তা, ফুচকা, দোসা, ছোলা বাটোরা থেকে শুরু করে চা-প্রায় সব রকমের খাবার পাওয়া যায় এখানে। তরুণ প্রজন্মের সান্ধ্যকালীন আড্ডাস্থল নগরীর হাতেম আলি কলেজ চৌমাথার মোড়। সন্ধ্যা নামতেই এই এলাকায় বসে ভ্রাম্যমাণ বাহারি ফাস্ট ফুডের দোকান। বিপদজনক জেনেও এসব দোকানগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে খাবার প্রিয় মানুষের সংখ্যা।
চৌমাথা মোড় সংলগ্ন লেক ঘেষেই সড়কের ধারে সন্ধ্যার পর চোখে পড়ে স্ট্রিট ফুডের বাহারি ভ্রাম্যমাণ দোকান। কেউ দাঁড়িয়ে কেউবা বসে খাবার খাচ্ছেন, কেউবা আবার অপেক্ষায়। কি নেই এসব স্ট্রিট ফুডশপে! এছাড়া কম দামে পাওয়া যায় বলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেতা। মুরগির শিক কাবাব ৫০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ৬০ টাকা, স্টু ৪০ টাকা, গরুর শিক কাবাব ৪০ টাকা, জলি কাবাব ১০ টাকা, বার্গার ২৫ টাকা, টিকিয়া ১০ টাকা, এছাড়া বাহারি সব খাবার মেলে স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোতে।
তবে কিছু কিছু স্ট্রিট ফুড অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত ও পরিবেশিত হয়। এতে বিভিন্ন জটিল ও মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এরপরও খেতে উপাদেয় বা মুখরোচক ও দামে সস্তার কারণেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ খাবারগুলো। আসাদুজ্জামান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। বন্ধু বান্ধব নিয়ে এসেছেন মুখরোচক এসব খাবারের স্বাদ নিতে। তিনি বলেন, অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে কম দামে এসব খাবার পাওয়া যায়। নগরীর কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা এস.আর সোহেল বলেন, প্রতিদিন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে এখানে চলে আসি। এখানে গরুর শিক কাবাব বেশ মজাদার, দামও নাগালের মধ্যে। দোকানদার আজিজুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। করোনাকালে বেশ কয়েকমাস ব্যবসা মন্দ ছিল। এখন আবার ফিরতে শুরু করেছে। এখন ৩ জন স্টাফ নিয়ে ভালোই চলছে তার ভাসমান স্ট্রিট ফুড ব্যবসা। খাবার পণ্য ক্রয় ও স্টাফদের হাজিরা দিয়ে ১৫০০ টাকার মতো আয় হয়। আরেক দোকানদার খলিল হাওলাদার বলেন, আমাদের এখানে মধ্যবয়সী ক্রেতা বেশি। এছাড়া প্রোডাক্ট অনুযায়ী স্টুডেন্টরা বেশি আসে। তবে এসব খাবার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তার সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি।
Leave a Reply