কাজী জাহাঙ্গীর ॥ রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে রয়েছে এমন সংখ্যা একদম হাতে গোনা। এরমধ্যে বরিশালের এ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন অন্যতম। শুধু তাই নয় বরিশাল বিএনপিতে নারী হিসেবে প্রথম কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, শহীদ জিয়ার আদর্শ ও বেগম জিয়ার অনুপ্রেরণাই আমার শক্তি। তার জন্ম বরিশালে এবং বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট নাসির আহমেদ ও মা জাহানারা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। নগরীর সদর গালর্স থেকে এসএসসি ও মহিলা কলেজে ইন্টারমেডিয়েট শেষ করে বিএম কলেজ থেকে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর বরিশাল ল’কলেজ থেকে এল.এল.বি সম্পন্ন করেন তিনি। রাজণৈতিক হাতে খড়ি হয় ১৯৮৪ সালে, বরিশাল বিএম কলেজে অনার্স পড়াকালীন সময়ে। এর পর ১৯৮৭ সালে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ (বাকসুর) এজিএস নির্বাচিত হন। যা বিএম কলেজের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে তিনিই একমাত্র নারী এজিএস ছিলেন। এছাড়া ১৯৯১ সালে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে বরিশাল জেলা মহিলা দলের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই সময় তিনি বরিশাল জেলা বিএনপি’র শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবং ১৯৯৭ সালে মহিলা দলের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন শিরিন। তাছাড়া ২০০০ সালে বরিশাল মহানগর মহিলা দলের সাধারন সম্পাদক, ২০০৩ সালে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০০৯ সালে বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ২০১০ সালে মহিলা দলের কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এবং একই বছর বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন তিনি। ২০১১ সালে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির শাখার সাধারন সম্পাদক’র দ্বায়িত্ব পান। মাঠ পর্যায় থেকে উঠে আসা এই নারী নেত্রী ৮ম জাতীয় সংসদের সদস্য (সংরক্ষিত আসনের এমপি), ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন। সর্বশেষ তাকে কেন্দ্রিয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদের দায়িত্ব দেয়া হয়। অনবদ্য রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি এই জননন্দিত নেত্রী এ্যাডভোকেট বিলকিস আকতার জাহান শিরিন বরিশাল সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দীর্ঘ এক যুগ অধ্যাপনা করেন। ১/১১ থেকে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো রাজনৈতিক মামলা হয়েছে এর মধ্যে ৪টি মামলা চলমান রয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে নেত্রীকে মাইনাস করারও বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে ছিলেন শিরিন। সম্প্রতি বরিশাল মহানগর কমিটি নিয়ে বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, বর্তমান কমিটি নিয়ে সবাই খুশি কারণ বিগত দিনে নেতৃত্বে একক আধিপত্যের কারণে নতুন কোন নেতা দলের জন্য তৈরী হয়নি। আর একারণেই দল উজ্জীবিত হতে পারেনি বরিশালের সংগঠনগুলোতে। আর এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বিসিসির মেয়র নির্বাচন। বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত আসনটির সিটিকর্পোরেশনে প্রায় ৭০% ভোট বিএনপির। অথচ সেখানে সিটি নির্বাচনের বিএনপির কোন ভুমিকা দেখা যায়নি। নামকাওয়াস্তে কিংবা লোক দেখানো ভুমিকা রেখেছে সাবেক কমিটির নেতৃবৃন্দ। আর এতে আমাদের তৃণমুল নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়েছে। আর এরই ফলশ্রুতিতে আজকের এ প্রয়াস। সাতটি জেলা ও একটি মহানগরের দলীয় কার্যক্রম ২০০৮সালে নেত্রীর শ্লোগান ছিলো দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও এই প্রতিপাদ্যকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সাংগাঠনিক কার্যক্রম চলছে। বরিশাল মহানগর কমিটি নিয়ে শিরিন আরো বলেন, একসময় শোনা যেতো বিভিন্ন নেতার দুর্গখ্যাত বরিশাল মহানগর। কিন্তু কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর তাদের নিয়েতো কোন উত্তাপ দেখা যায়নি। আর এতেই প্রমাণিত হয় যে, তৃণমুল নেতাকর্মীরা এই কমিটিতে খুশি হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নেয় তা আমাদের মানতে হবে এবং এটাই আনুগত্য। দলের আনুগত্য না থাকলে শৃঙ্খলা থাকেনা। আর শৃঙ্খলা না থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়না। কিন্তু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আপনার দলের একমাত্র আন্দোলন হলো সরকার পতন সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে কি বর্তমান কমিটি দিয়ে তা সম্ভব হবে জানতে চাইলে শিরিন বলেন, কেন্দ্রের কাজ কি ? কেন্দ্র তো নেতা তৈরী করে। আজকে যাদেরকে দক্ষ বলছেন (সাবেক মহানগর কমিটি) তারাওতো কেন্দ্রের দিকনির্দেশনায় এই পর্যায়ে এসেছে। তাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকেই মেনে নেয়া প্রকৃত সাংগাঠনিক চরিত্র। বরিশাল বিএনপির একাধীক নেতা বলেন, এ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন তার নির্ভেজাল নেতৃত্বে বরিশাল বিভাগের সকল জেলা উপজেলা বিএনপি আজ ঐক্যবদ্ধ। তিনি কেন্দ্র ঘোষিত সকল আন্দোলন সংগ্রামে স্বশরীরে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে থাকেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি সাংগঠনিক সফর ছাড়া ঘরে বসে সময় পার করেননি। তিনি প্রতিনিয়ত বরিশাল বিভাগের সকল জেলা উপজেলায় সাংগঠনিক সফর করে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জিবিত করে দলকে সুসংগঠিত করে আসছে। সরোয়ার-চান-কামালকে বাদ দিয়ে সদ্য বরিশাল জেলা ও মহানগর আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ায় বরিশাল বিএনপি অভিভাবক এখন দক্ষিণা জনপদের দলের পরীক্ষিত একমাত্র নারী নেত্রী এ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন। অভিভাবকের ভূমিকায় বিলকিস জাহান শিরিনের নেতৃত্বে আগামী দিনে বরিশাল বিভাগ বিএনপি আরো সাংগঠনিকভাবে বেগবান ও শক্তিশালী হবে বলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।
Leave a Reply