নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
বরিশাল নগরীর আমানাতগঞ্জ এলাকার ৪নং ওয়ার্ড-এর ৮৩নং মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে বিদ্যালয়টি এখন ধ্বংসের পথে।
অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্ত ও নিজের ইচ্ছেমতো স্কুলের নিয়মনীতি চালু করায় নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
আর এসব বিষয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়টির একাধিক সহকারি শিক্ষক।
সূত্রে জানা যায়, ৮৩নং সরকারি মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৭ সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় থেকে ওই বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে পথ চলে আসছে।
কিন্তু বর্তমানে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুনের একক সিদ্ধান্ত ও তার স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণে স্কুলটি আজ বেহাল দশায় পড়ে রয়েছে। আর এতে করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এখন হুমকির মুখে।
লিখিত অভিযোগে আরো জানা যায়, ওই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন স্কুলে নিয়মিতভাবে না এসে বরং হাজিরা খাতায় নিজের মতো করে সময় বসিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে পূরন করতেন। নিজের খেয়ালখুশি মতো শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতেন। এ নিয়ে সভাপতি মহোদয় কঠিন হলে মাহমুদা খাতুন স্কুল কমিটির বারাবর নিজের অনিয়মের কথা স্বীকার করে একটি মুসলেকা দিয়ে আর এমন হবে না বলে জানান, কিন্তু পরের দিন থেকেই একই অনিয়ম করতে থাকেন।
এ নিয়ে উক্ত স্বনামধন্য বিদ্যালয়টির ১১ জন সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বর্তমানে ওই বিদ্যায়লটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছোট ছেলে বর্তমান সভাপতি হিসেবে সাইদুল হক পলাশ দায়িত্বভার গ্রহন করেন।
গত বছরের ৬ই নভেম্বর ওই লিখিত অভিযোগে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, শিক্ষক মিলনায়তনে এবং বিদ্যালয়ের ক্লাস গিয়ে আমাদের সহকারি শিক্ষকদের লক্ষ করে চিৎকার করে মন্দকথা বলা, সকলের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করা, নিজের ইচ্ছেমতো স্কুল ছুটি দেয়া, স্কুলে সম্পৃক্ততা নেই সেই সব বহিরাগত লোকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে আড্ডা দেয়া, প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বহিরাগতদের বসানো। পাঠদান কক্ষ দখল করে তার নিজের ব্যক্তিগত ও অফিস করা, বিদ্যালয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেখিয়ে বহিরাগত লোকদের দিয়ে নানা ভয়-ভীতি দেখানো, স্কুল পরিচালনা কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকা, বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের নামে ভূয়া বিল করা, বিভিন্ন সরকারী দিবস পালন না করা, নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত না হওয়া সহ নানা অভিযোগ দেন শিক্ষক সহ অন্যান্য সকলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, “আমরা পাঠদানে মানসিক প্রস্তুতি হারিয়ে ফেলেছি। প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন যোগদান করার পর আমাদের নানাভাবে হয়রানী করছে। স্কুলের নিয়ম-নীতি পাল্টে ফেলেছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন আমাদের না জানিয়ে শিক্ষকদের কথা বিনা অনুমতিতে রেকর্ডিং, ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারন করছেন। আমরা নিজের বিষয় আলোচনা করেও তিনি সেই কথা ও ভিডিও চিত্র ধারন করছেন।” আর এসব রেকর্ডিং ও ভিডিও দিয়ে আমাদের জিম্মি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই আমরা সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি।
এসব অভিযোগের বিষয় মাহমুদা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, তার কথা কেউ শোনে না। তাকে তাড়ানোর জন্য সবাই এক হয়েছে। এছাড়া শ্রেণীকক্ষ দখলের বিষয় তিনি আরো বলেন, “আমার কোন রুম নেই, তাই এখানে আমি বসি। আমি সরকারি চাকুরী করি কোন সভাপতির কথায় চলতে পারবো না। আমার কাছেও বড় বড় সাংবাদিক রয়েছে।”
সূত্র জানান, মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে এর পূর্বেও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়মের দায়ে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর পরিচালক ( পলিসি ও অপারেশন) যুগ্ন সচিব স্বাক্ষরিত কাগজে ঝালকাঠি জেলাধীন নলছিটি উপজেলার ৬৮ নং বীরনারায়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলী ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার জন্য জোর সুপারিশ করেন।
এ বিষয় স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি’র ছোট ছেলে জনাব সাইদুল হক পলাশ যিনি শিক্ষা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত রয়েছেন। ওনার কুড়ি বছরেরও অধিক সময় ধরে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা দিয়ে বিদ্যালয়টিকে একটি আদর্শ বিদ্যালয়ে পরিণত করার রূপকল্প তিনি সূচনা করেছেন। জরাজীর্ণ বিদ্যালয়টি ক্রমশ প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা বিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
তাই প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুনকে দ্রুত অন্যত্র বদলীর দাবিও জানান তারা।
Leave a Reply