একটি অপ্রত্যাশিত মৃত্যু। অনেক জল্পনা আর হাজারো প্রশ্ন…। গত ১৪ জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজ বাসা থেকে বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাণখোলা, হাসিখুশি এই নায়কের মৃত্যুর পরেই বলিউড ব্যক্তিত্ব, গণমাধ্যম, অনলাইন ও অফলাইনের শুরু হওয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ থামছেই না। এর মধ্যে ছোট ও বড় পর্দার তারকা এবং বিজেপি নেতা রূপা গাঙ্গুলি টুইটারে লেখেন, ‘১৫ মে থেকে ১৪ জুন- এক মাসের মধ্যে সুশান্তের ঘনিষ্ঠ তিনজন আত্মহত্যা করেন। মনোমিত গ্রেওয়াল, প্রেক্ষা মেহতা আর দিশা সালিয়ান। চতুর্থ জন সুশান্ত নিজে।’
এই চার মৃত্যুর সঙ্গে কারও কোনো নিখুঁত পরিকল্পনা বা গোপন রহস্য জড়িয়ে থাকতে পারে বলে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলেন তিনি। অন্যদিকে সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন অভিনয়শিল্পী পায়েল রোহাতগিসহ অনেক তারকা ও অগণিত ভক্ত-দর্শক। সবার বিশ্বাস, নিচে দেওয়া রহস্যময় এ ১০টি প্রশ্নের উত্তর মিললেই সব জট খুলে যাবে।
১৪ জুন সুশান্তকে সর্বশেষ দেখা গেছে সকাল সাড়ে ৯টায়। আনারের জুস নিয়ে ঘরে ঢুকতে। তার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ জানায়, আনুমানিক বেলা ১টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু এর মধ্যেই দুপুর ১২টার দিকে উইকিপিডিয়ায় সুশান্তের মৃত্যুর খবর আপডেট করা হয়েছে বলে অনেকের দাবি। কে করল? কীভাবে জানল?
সুশান্ত যে সবুজ ওড়না দিয়ে ফ্যানে ঝুলেছেন, সেখানে কেবল তার বাঁ হাতের তিনটি আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। কিন্তু অভিনেতা বাঁহাতি ছিলেন না, বরং ডানহাতি ছিলেন। কেবল এক হাতের তিনটি আঙুল দিয়ে কীভাবে নিজেকে ঝোলানো সম্ভব? এই সবুজ ওড়না কার? কোত্থেকে তার ঘরে এসেছে? তা ছাড়া সুশান্তের ঘরে কোনো চেয়ার, টুল কিংবা সেই জাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি, যার ওপর ভর করে তিনি ফ্যানের সঙ্গে নিজেকে ঝোলাবেন। বিছানা থেকে ফ্যানের দূরত্ব এমন যে, বিছানায় ভর করে ফ্যানের সঙ্গে ঝোলা বেশ কঠিন!
সাধারণত ঝুলে যারা আত্মহত্যা করেন, তাদের গলায় ইংরেজি ইউ কিংবা ভি বর্ণের দাগ তৈরি হয়। কিন্তু সুশান্তের গলায় ‘ও’ আকৃতির দাগ পাওয়া যায়। যে দাগটি তৈরি হয়েছে, সেটি ওড়না বা কাপড়ের বেল্টের সঙ্গে কমÑ বরং প্লাস্টিকের দড়ির সঙ্গে মিল বেশি।
সাধারণত এ ধরনের আত্মহত্যার পর মৃত ব্যক্তির ঘাড়ের নির্দিষ্ট একটা হাড় ভেঙে যায়। জিব আর চোখ খানিকটা বের হয়ে আসে। মুখের রঙ নীলাভ হয়ে যায়। পা মাটির দিকে কাত হয়ে থাকে। কিন্তু সুশান্তের ঘাড়ের কোনো হাড় ভাঙেনি, মুখের রঙ বদলায়নি, জিব আর চোখও বের হয়ে আসেনি। পা-ও ঠিকঠাক ছিল। সুশান্তের ঝুলন্ত অবস্থার ছবি, যেটি আত্মহত্যার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণÑ সেটি দেখার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। অনেকে বলেছেন, তার হাতে ও চোখের ওপর দাগ ছিল। যেটি ধস্তাধস্তির সাক্ষ্য বহন করে।
সুশান্তের বাসার অতিরিক্ত চাবির সেট সুশান্তের মৃত্যুর কিছুদিন আগে থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অন্যদিকে তার বাসার সিসিটিভি ঠিক তার মৃত্যুর আগের রাত থেকেই বন্ধ ছিল। কেন? আর সেই চাবির গোছাটাই বা কোথায় গেল?
মৃত্যুর আগের রাতেও সুশান্ত হাসিখুশি ছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করেছেন। পর দিন রাঁধুনিকে দুপুরের মেন্যু জিজ্ঞেস করেছেন আর মোবাইলে ‘কল অব ডিউটি : মাডার্ন ওয়ারফেয়ার’ গেম খেলেছেন। যে গেমটি খুব ঠা-া মাথায় বুদ্ধি খাটিয়ে খেলতে হয়। সবকিছুই মোটামুটি স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। কিন্তু এর পরও রাতের অন্ধকারে নয়, দিনের বেলা সুশান্তের আত্মহত্যা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
সুশান্তের মৃত্যুর (দুটো পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট ও ভিসেরা রিপোর্ট অনুসারে) পর তার মরদেহ কাছের লীলাবতী হাসপাতালে না নিয়ে দূরে কুপার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর আগে বলিউডে যাদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, যেমনÑ পারভীন ববি, দিব্যা ভারতী ও জিয়া খানের মরদেহ ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। কুপার হাসপাতালের পরিচালক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মহেশ ভাটের বন্ধু। আর মহেশ ভাট ও সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই বলছেন, তাদের ভেতর প্রেমের সম্পর্ক ছিল বা থাকতে পারে। সুশান্তের মৃত্যুর পর মহেশ ভাট ও রিয়া চক্রবর্তীর কিছু ঘনিষ্ঠ ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
সুশান্ত ইনস্টাগ্রামে মহেশ ভাটকে অনুসরণ করতেন না। কিন্তু মৃত্যুর পর তার আইডি মহেশ ভাটকে অনুসরণ করছে! কে সুশান্তের আইডি চালাচ্ছে?
ছয় মাস আগে রিয়াই সুশান্তকে অবসাদের কথা বলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান ও বাসা বদল করান। ৬ জুন তিনি ইনস্টাগ্রামে লাল রঙের পোশাক পরা একটা ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘আনলক, আনউইন্ড, আনটাই, ও ডার্লিং, ইউ উইল ফ্লাই।’ এটা একটা খুব সাধারণ কো-ইনসিডেন্স। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সুশান্তের বাসায় সন্দীপ সিং নামে তার এক বন্ধুও থাকত। রিয়া চাইতেন না, সে সুশান্তের বাসায় থাকুক। এমনকি এ নিয়ে দুজনের মনোমালিন্যের কারণে সন্দীপ সুশান্তের মৃত্যুর কিছুদিন আগে বাসা ছেড়ে চলে যান।
হ সুশান্ত মৃত্যুর আগে ছয় মাসে ৫০টি মোবাইল সিম বদলান। কিন্তু কেন?
Leave a Reply