করোনা আতঙ্কে সারাবিশ্বে জারি ছিল লকডাউন। আর লকডাউনে থেকে সারাবিশ্বেই ঘটেছে বিচিত্র সব ঘটনা। এসব ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- আজহারুল ইসলাম অভি
লকডাউনে সুটকেসে ভরে বন্ধুকে বাড়ি আনার চেষ্টা!
দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনে আটকে থেকে প্রিয়জন ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না অনেকেই। এ কারণে অনেকেই দিশাহারা হয়ে লকডাউন ভেঙে রাস্তায় নামতে চাইছেন। তবে নিয়ম না ভেঙে অদ্ভুত এক কা- ঘটিয়েছে ১৭ বছরের এক কিশোর। বন্ধুকে সুটকেসে ভরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকের মাঙ্গালোর শহরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ওই কিশোর যে হাউজিং কমপ্লেক্সের বাসিন্দা, সেখানের কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বাইরের কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তাই বন্ধুকে বাসায় নিয়ে আসতে উপায়ান্তর না দেখে এমন কা- ঘটায় সে। তবে পুরো পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয়েছে তার। রাস্তায় তার কাছে এত বড় ও ভারী স্যুটকেস দেখে সন্দেহ হয় হাউজিং কমপ্লেক্সের নিরাপত্তারক্ষীদের। তারা পুলিশকে ডেকে আনলে সুটকেস খোলা হয়। বেরিয়ে আসে জ্যান্ত এক মানুষ। এ ঘটনায় ওই কিশোর ও তার বন্ধুকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশের কাছে ওই কিশোর জানিয়েছে, বাড়িতে থাকতে তার আর ভালো লাগছিল না। এ কারণে বন্ধুকে বাড়িতে আনার চেষ্টা করছিল। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ম্যাঙ্গালোর পুলিশের কর্মকর্তা এন বিশ্বনাথ বলেন, ওই কিশোর টানা ২১ দিন ঘরে থেকে অবসাদে ভুগছিল। তাই সে সুটকেসের ভেতরে লুকিয়ে বন্ধুকে তার বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ ওই এলাকায় বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
একঘেয়েমি কাটাতে বিয়ের পোশাক পরে ঘোরাফেরা
লকডাউনে থেকে বিরক্ত হয়ে টেক্সাসের একদল তরুণী বের করেছেন চমকপ্রদ এক আইডিয়া। মূলত গ্রুপ চ্যাট থেকেই বের হয় আইডিয়াটি। বিয়ের পোশাক পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলা শুরু করেন তারা। এর পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। বিয়ের ওপর আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এই বুদ্ধি বের করেছেন ওই তরুণীরা। বিয়ে করতে যেহেতু আইনি বাধা নেই, সেহেতু তারা বিয়ের পোশাক পরেই বেরিয়ে পড়েন বাসা থেকে। রাতের বেলা পার্টিও করেন তারা গোপনে।
লকডাউনে ইংল্যান্ডে কিছু মজার আইন
১. দেখা করা যাবে একজনের সঙ্গে : ইংল্যান্ডের নতুন নিয়ম অনুযায়ী একঘরের একজনের সঙ্গে একবারে অন্যঘরের একজনই দেখা করতে পারবেন। সেটি হতে হবে পার্কে দুই মিটার দূরত্বে থেকে। আপনি যদি আপনার মা-বাবার সঙ্গে না থাকেন, তা হলে এই আইন অনুযায়ী একই সঙ্গে আপনার মা-বাবার সঙ্গে আপনি দেখা করতে পারবেন না। তবে আপনি চাইলে মাকে গাড়িতে বসিয়ে বাবার সঙ্গে বা বাবাকে গাড়িতে বসিয়ে মায়ের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টাও কথা বলতে পারেন। আইনানুযায়ী এটা বৈধ।
২. লকডাউনের মধ্যে মুক্তবাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাইলে আপানি পার্কে যেতে পারবেন এবং অন্য বাসার সর্বোচ্চ একজনের সঙ্গে বসে কথা বলতে পারবেন। কিন্তু আপনি চাইলে পার্কে না গিয়ে পার্কের চেয়ে বড় হলেও অন্য কারও ব্যক্তিগত বাগানে গিয়ে বসতে পারবেন না। শুধু পাবলিক প্লেসে বসেই কথা বলার নিয়ম জারি করেছে সে দেশের প্রশাসন।
৩. নতুন নিয়ম অনুযায়ী টাকার বিনিময়ে যারা শিশুকে লালন-পালন করেন, তাদের কাছে আপনার শিশুকে রাখতে পারবেন। কিন্তু শিশুকে কোনোভাবেই বৃদ্ধ দাদা, দাদি কিংবা নানা, নানির কাছে রাখা যাবে না।
লকডাউনে বাঁচার চেয়ে মরে যাবে বেশি লোক!
সমস্যা সারাতে গিয়ে আমরা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে ফেলতে পারি না। একটি দেশকে মহামন্দার মধ্যে ফেলে আপনারা বহু লোককে মেরে ফেলতে যাচ্ছেন। আপনারা হাজার হাজার লোককে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও এ কথাগুলো বলেছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, লকডাউনের কারণে যে সংখ্যক মানুষ কোভিড ১৯-এর ছোবল থেকে প্রাণে বাঁচবে, এর চেয়ে অনেক মানুষ মারা যাবে। লকডাউন তুলে নেওয়ার যুক্তি হিসেবে ট্রাম্প এই কথা বলেছেন। কিন্তু তার কথায় কী যুক্তি আছে? কেউই তাকে মহামারীর সময়ের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনে করেন না।
মজার বিষয় হলো, ট্রাম্প যখন এ বক্তব্য দেন-প্রায় একই সময়ে টাইমস অব লন্ডনের একটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য ছাপা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল অনুষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ের বিখ্যাত এক অধ্যাপকের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘করোনা ভাইরাস লকডাউনের কারণে জিডিপি যদি ৬.৪ শতাংশের নিচে নেমে যায়, তা হলে এই ভাইরাসের হাত থেকে যত মানুষকে বাঁচানো যাবে- এর চেয়ে মানুষের গড় আয়ু বেশি হারাতে হবে।’
দক্ষিণপন্থি কলামিস্টরা দ্রুত এ গবেষণা তথ্য লুফে নিয়েছেন এবং লকডাউন তুলে নেওয়ার পক্ষে কথা বলছেন। আরও ভয়ানক বিষয় হলো, বিবিসি পর্যন্ত এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। নানা ধরনের পরিসংখ্যান ব্যাখ্যা করে গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়েছে, যেসব দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির গড় বেশি, সেসব দেশের মানুষের গড় আয়ু বেশি হয়ে থাকে। ওই গবেষকের যুক্তি হলো, লকডাউনের কারণে জিডিপি পড়ে যাবে এবং এর ফলে গড় আয়ু কমে যাবে।
বস যখন আলু হয়ে যান
লকডাউনের কারণে আমরা নানা অদ্ভুত নিয়মের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা বিষয় হচ্ছে হোম অফিস। কিন্তু হোম অফিস করতে গিয়ে এবার ঘটেছে মজার ঘটনা। মাইক্রোসফটের টিম মিটিংয়ের সময় ঘটেছে এই ঘটনা। ক্লেগ নামের এক কর্মচারী টুইট করেছেন, মিটিং চলাকালীন হঠাৎ করেই তাদের বসের চেহারার বদলে সেখানে একটা আলুর ছবি দেখা যাচ্ছিল। মূলত কোনো একটি সেটিংস উল্টাপাল্টা হয়ে যাওয়ার কারণে পটেটো ইফেক্ট চলে এসেছিল সেই বসের চেহারার ওপরে এবং ব্যবহার না জানায় কোনোভাবেই সেটি আর সরানো যাচ্ছিল না। ইন্টারনেটে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করেছিল ছবিটি।
লকডাউন তুলে নিতে বিক্ষোভ!
করোনা ভাইরাসের মহামারী নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নাগরিকদের ঘরবন্দি থাকার যে নির্দেশনা, তা তুলে নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে দেশটির বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা। টেক্সাস ও উইসকনসিনে কয়েকশ মানুষ বিক্ষোভ করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। উইসকনসিনের ব্রুকফিল্ডে মূল সড়কের একপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা নাড়িয়ে অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষের ঘরবন্দি দশার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানান। কেবল ওই দুটি অঙ্গরাজ্যেই নয়, গত সপ্তাহ থেকেই ওহাইও, মিনেসোটা, মিশিগান ও ভার্জিনিয়ায় ‘ঘরে থাকার নির্দেশনা’ তুলে নেওয়ার দাবিতে বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ চলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘সামাজিক দূরত্ব’ ও মাস্ক পরার নির্দেশনা অবজ্ঞা করছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
লকডাউনের ফলে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছে মানুষ!
করোনা ভাইরাসে মানুষ ঘরবন্দি। এই বন্দিদশার প্রভাব পড়ছে মনে! বিশ্বজুড়ে লকডাউন হওয়ার পর গবেষকরা অনেক মানুষের স্বপ্নের তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছিলেন। ফিলিপাইন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা অনেকেই অস্বাভাবিক ও অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছেন। ফিলিপাইনের বাসিন্দা এলিসা অ্যাঞ্জেলি বলেছেন- আমি দেখলাম, মধ্যরাতে আমাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছুদিন পর থেকে জিনিসপত্র হারানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। আমার টাকা হারিয়েছে। না হলে আমার ল্যাপটপ হারিয়েছে। প্রায় রোজই স্বপ্ন দেখছি।
অধ্যাপক ডেইরড্রে ব্যারেট এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মানুষের স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে মানুষের স্বপ্নের ধরন বদলেছে। তার বক্তব্যÑ কোনো বড় ধরনের চাপ তৈরি হলে মানুষের অদ্ভুত উদ্বেগের স্বপ্ন দেখার প্রবণতা বেড়ে যায়। তিনি বলেন, করোনা অদৃশ্য শত্রু।
রেশন আনতে গিয়ে বউ নিয়ে ফিরলেন যুবক!
লকডাউনের মধ্যেই অবাক কা- ঘটালেন উত্তরপ্রদেশের এক যুবক। সবজি ও রেশনের জিনিস আনতে বাইরে যান ওই যুবক। কিন্তু ফিরে এসেই চমকে দিলেন সবাইকে। ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে এলেন বউ। এ রকম অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী রইল গাজিয়াবাদ জেলা। সাহিবাবাদ এলাকায় লকডাউনের মধ্যে ছেলে হঠাৎ করেই রেশনের জিনিস না এনে বউ নিয়ে আসায় যুবকের মা অবাক! জানা গেছে, রেশন দোকানে না গিয়ে নিজের প্রেমিকাকেই লকডাউনের মধ্যে সোজা বিয়ে করে বাড়িতে হাজির হন ওই ব্যক্তি। তার এই কা-ে মা ঘোর বিরোধিতা করেন এবং বউকে বাড়িতে ঢুকতে না দিলে পুলিশ পর্যন্ত চলে যায় এই ঘরোয়া ঝামেলা।
বর-বউয়ের পোশাকেই থানায় হাজির হন সদ্য বিবাহিত ওই যুবক। থানায় তার মা উপস্থিত হয়ে স্পষ্ট জানান, লকডাউন অমান্য করে বিয়ে করা ছেলেকে তিনি এখন তার বাড়িতে কখনই ঢুকতে দেবেন না। তার মা ক্ষুব্ধ হয়েই জানান, ছেলে রেশন আনতে গিয়ে বিয়ে করে চলে এসেছে। তিনি কখনই এটি মানবেন না। ।
লকডাউনে হেয়ারকাট, জরিমানা ৮ লাখ টাকা
জার্মানিতে লকডাউনের নিয়মভঙ্গের একাধিক ঘটনা শিরোনামে উঠে এসেছে। কখনো নিয়ম অমান্য করে কেউ পৌঁছে গিয়েছেন শপিংমলে তো কেউ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। সুরক্ষাবিধি না মেনেই লকডাউনের আবহে হেয়ারস্টাইলিস্ট ডেকে বাড়িতেই চুল কাটেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ক্লাবের দুই তারকা জ্যাডোন স্যাঞ্চো ও ম্যানুয়েল আকানজি। এতেই বড় ভুল করে বসেছেন তারকা দুই ফুটবলার। ওই ছবি আবার তারা ফলাও করে পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে দেখা গেছে, ফুটবলার ও হেয়ারস্টাইলিস্ট- কারও মুখেই নেই মাস্ক। চুল কাটার সময় হাতে গ্লাভসও পরেননি হেয়ারস্টাইলিস্ট। এ খবর জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের কাছে যেতেই কড়া পদক্ষেপ করা হয়।
জার্মান ফেডারেশন জানায়, নিয়মভঙ্গের দায়ে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয় তাদের। জানা গেছে, ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ৮ লাখ ৫৩ হাজার রুপি করে জরিমানা গুনতে হয় তাদের। ফেডারেশন জানায়, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই স্যাঞ্চোরা হেয়ারকাট করেছেন। এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। এ জন্যই তাদের ৮ হাজার ৯০০ ডলার জরিমানা করা হয়। কিন্তু ফেডারশনের এ সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্যাঞ্চো। টুইটারে ক্ষোভ উগরে দিয়ে ইংলিশ স্ট্রাইকার বলছেন, এ সিদ্ধান্ত নিতান্তই হাস্যকর। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইটটি মুছে ফেলেন তিনি।
Leave a Reply