নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরিশাল বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে সৎ যোগ্য ও দ্বায়িত্বশীল নেতা মনে করে সাবেক দুই ছাত্রনেতা এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান নান্টুকে আহবায়ক ও এ্যাডভোকেট আকতার হোসেন মেহবুলকে সদস্য সচিব করে জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে। বিগত ১০ মাসে দলের চেয়ে বেশি দ্বায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন এলাকার দলীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্যে। জানা গেছে, এই অল্প সময়ে কোটিপতি বনে গেছেন এই দুই নেতা। তারা দুজন এতোটাই বেসামাল ও বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলেন যে দলের হাইকমান্ডের ফোন পর্যন্ত রিসিভ করতেন না। তাদের এহেন কর্মকান্ড অতিষ্ঠ হয়ে দলের বৃহৎ স্বার্থে নান্টু ও মেহবুলকে লাল কার্ড দেখিয়ে দল থেকে বিতাড়িত করে দিলেন গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে। বরিশাল বিএনপির একাধিক সুত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে সাবেক দুই ছাত্র নেতা যথাক্রমে এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান নান্টুকে আহবায়ক ও মোঃ আকতার হোসেন মেহবুলকে সদস্য সচিব করে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি। কিন্তু দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর দলীয় কর্মকান্ডের চেয়ে বেশি মনোযোগী হন ঘুষ বাণিজ্যে। আর এই জন্য দলের পরীক্ষীত ও নিবেদিত নেতাদের সরিয়ে রেখে বিভিন্ন বিতর্কিত আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করা নেতাদের কাছে টেনে নেন নান্টু ও মেহবুল। কাঁচা বাজার, পুকুরের জিয়লমাছ, সিজনাল ফলমূল থেকে শুরু করে স্ত্রী-সন্তানের পোশাক, আই ফোন, কমপ্লিট স্যুটসহ এমন কিছু বাকী ছিলো না যা তারা দুজনে গ্রহণ করেন নাই। একটি সুত্র জানায়, মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি গত মৌসুমে দুই নেতার বাসায় নেতাদের উৎকোচ দেয়া সিজনাল ফলমূল রাখার যায়গা ছিলো না। সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনে দলের এক নেতাকে অবমূল্যায়নের কারণে উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নে কর্মীসভা করতে যাওয়ার পথে ঐ নেতা তার দলবল নিয়ে গণধোলাই দেয় নান্টুকে। ঘটনাটি ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা পরে যায়। তাদের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড তুলে ধরে সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হলেও হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে তারা ক্রমেই লাগামহীন হয়ে ওঠে। গত কয়েকদিন আগে দলের পরীক্ষীত ও নিবেদিত নেতাদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে ছাত্রদল নেতা জিতু হত্যার প্রধান আসামি, মাদক কারবারি ও কথিত সর্ব নেতা ডাকাত সরদার অহিদুল ইসলাম প্রিন্সকে সদস্য সচিব করে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি এবং বরিশাল বিএনপির এক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মীবান্ধব জননেতা সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খানকে খানকে বাদ দিয়ে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চশমা বিক্রেতা হারুন শিকদারকে আহবায়ক করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণা করার পরপরই ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই টনক নড়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের। বাকেরগঞ্জ ও বাবুগঞ্জ টিকে গেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ছিলো বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার ৪ টি সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করার। আর এজন্য সেখানেও একইভাবে আওয়ামী ঘরানার লোক তৈরি করা ছিলো নান্টু ও মেহবুলের। জানা গেছে, তাদের কাছ থেকেও আগেভাগেই বানিজ্য আধাআধি সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকীটা সম্পন্ন করা হবে কমিটি ঘোষণার পরে। কিন্তু বাকেরগঞ্জ ও বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি কমিটি ঘোষণা করার পরপরই দূর্ণীতিবাজ ঘুষখোর দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় দলের হাইকমান্ড। এদেরকে সরিয়ে দিয়ে গতকাল ১৫ নভেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য জননেতা আবুল হোসেন খানকে আহবায়ক ও এ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীনকে সদস্য সচিব করে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের এমন সিদ্ধান্তে বরিশাল বিএনপিতে বইছে আনন্দ উৎসব। কুলাঙ্গার দুই নেতাকে বিদায় করায় সবাই যেন ঈদের খুশী। এ বিষয়ে আবুল হোসেন খান বলেন, হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তে দূর্ণীতিবাজরা পরাজিত হয়েছে, পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য ঘোষিত সদস্য সচিব কর্মীবান্ধব নেতা এ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন বলেন, দলের এই ক্রান্তিলগ্নে দলের একজন পরীক্ষিত নেতা যে দ্বায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে আমি তা পালন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সবাইকে সাথে নিয়ে দলের কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচী সর্ব স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এই নিশিরাতের অবৈধ সরকারকে হঠাতে রাজপথে থাকবো ইনশাআল্লাহ। তিনি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।