নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনা ভাইরাসের মধ্যেও টুং-টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে বরিশাল নগরের হাটখোলা কামারপল্লøী। দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেক কামাররা। কোরবানীর ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়ছে তাদের কাজের ব্যস্ততা। তবে বিশ্ব জুড়ে মহামারী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে থমকে আছে দেশ। তারপরেও প্রতিবারের তুলনায় এবছর কামারপল্লীতে কাজের চাপ অনেকটা কম দেখা গেছে।
নতুন চাপাতি, ছুরি তৈরির পাশাপাশি চলছে পুরনো অস্ত্রে শান দেওয়ার কাজ। বরিশাল নগরের হাটখোলা, নতুনবাজার, বাংলাবজার, নথুল্লাবাদ, চাঁদমারী,পলাশপুর বৌ-বাজার, বেলতলা, তালতলী বাজার, সদর উপজেলার চরকাউয়া, সাহেবেরহাট, লাহারহাট, কাশিপুর বাজার, কড়াপুর বৌসের হাটসহ ছোট-বড় সব হাটের কামাররা এখন একটু ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোর থেকে শুরু করে কাজ চলছে রাত পর্যন্ত। পলাশপুর বৌ-বাজারের আমল কর্মকার বলেন, ‘ঈদের আগে কাজে চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে প্রতিবারের চেয়ে এবছর করোনার কারনে কাজের চাপ অনেক কম। এজন্য বর্তমানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছি। আগে খুব সকালে দোকানে আসতাম আর বাড়ি যেতাম গভীর রাতে। এখন তারাতারি কাজ শেষ করে বাসায় চলে যাই। গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি কাজ করে হাজার দেড়েক টাকা আয় হচ্ছে ২/৩ দিন ধরে। আগে এর চেয়ে বেশি আয় হতো।
তিনি আরো বলেন, একটি বড় দা পাঁচ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ ৮০০ টাকা, এক কেজি ওজনের কুড়াল ৩ শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা, চাপাতি প্রকার ভেদে ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, বিভিন্ন আকারের ছোরা ৩৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্য সময়ের চেয়ে এখন চাপাতি, চাকু, ছুরির দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরের কামারপট্টির কামারদের এখন কাজের চাপ কিছুটা বেশি। একের পর এক ক্রেতা এসে দোকানে ভিড় করছেন আগে বর্তমানে একটু কম। তার পরও দোকান ছেড়ে যাওয়ারও কোন উপায় নেই। তাই সকাল, দুপুর খাবার তারা দোকানে বসেই সেরে নিচ্ছেন। পুরনো দুইটি দা, একটি বটি ও একটি ছুরিতে শান দেয়ার জন্য ৩৫০ টাকা নিচ্ছেন। অন্য সময় মজুরি ছিল ১৫০ টাকা। আর নতুন একটি ছোরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাকুু ৫০ থেকে ১০০ টাকা, বটি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
হাটখোলার সঞ্জয় কর্মকার বলেন, ‘সারাবছরই আমাদের তৈরি জিনিসের কমবেশি চাহিদা থাকে। তবে ঈদে পশু কোরবানীর জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, চাক্কুর কদর প্রতি বছরই বেড়ে যায়। কিন্তু এবছর করোনার কারনে তাই চাহিদার কম। তার পরেও কিছু তৈরি করে রাখছি। কড়াপুর হাটের অজয় কর্মকার বলেন, ‘আগে অন্য হাট-বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার হতো। তবে ঈদের আগে লোহার অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন এক হাজার ১হাজার টাকা থেকে ১২ টাকা আয় হচ্ছে। ঈদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে এবছর সময় কম লাগছে। এবছর আমি নতুন কাজের অর্ডার নেয়া বন্ধ করেনি। গতবছর এসময় অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম । এবছর তা উল্টো। তবে ব্যস্ততা থাকবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।
Leave a Reply