নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কু-কীর্তি ও অনৈতিকতায় বরিশালের সংবাদকর্মীরা এখন খবরের শিরোনাম হচ্ছেন। গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক ভাইকে ছাড়িয়ে নেওয়ায় প্রভাবশালী এক সাংবাদিককে নিয়ে যখন নগরীতে শোরগোল ঠিক তখন তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ অপর এক সংবাদকর্মী পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে চ্যাঞ্চল্য। অবশ্য ওই সংবাদকর্মী নিজে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার সহযোগী রনি হাওলাদার (১৮) নামের এক কিশোরকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এই বিষয়ে কাউনিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হলে বাংলা চলচ্চিত্রের সুনিপুণ কাহিনী চিত্রায়নের ন্যায় এই ব্ল্যাকমেইল চেষ্টা সবিস্তার জানা যায়।
পুলিশ এই বিষয়ে অনঢ় অবস্থানে থাকলেও ওই বৃদ্ধাকে আইনী পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে বরিশাল মিডিয়ার তিন সাংবাদিক চাপের মুখে ফেলতে গেলে আরও হিতে বিপরিত ঘটে। ওই বৃদ্ধা নারী ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৬ আগস্ট এ সংক্রান্তে একটি মামলা করতে বাধ্য হন। অবশ্য এর আগে আপসরফার চেষ্টা চালানো হয়েছিল, আসমা আক্তার (ছদ্মনাম) এই অভিযোগ করেন।
তার ভাষায়, মজিবর রহমান নাহিদ (২৭) নামের এক তরুণ ঘটনাচক্রে পরিচয় সূত্রে নগরীর স্ব-রোড এলাকায় আসমা আক্তারের বাসায় যাতায়াত করে আসছিল। আলোচ্চ্য নাহিদের সবে বরিশাল মিডিয়া অঙ্গনে আবির্ভাব ঘটেছিল। আনন্দ টেলিভিশন চ্যানেলের ব্যুরো চিফ হিসেবে পরিচয় দিতো। তরুণ বয়সি নাহিদ একপর্যায়ে আসমা আক্তারের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে একটি আস্থার জায়গা তৈরি করে।
কিন্তু সেই নাহিদ রেখা সাহা নামের ফেসবুকে একটি ফেক আইডি খুলে বৃদ্ধা আসমা আক্তারকে অতিসম্প্রতি রিকোয়েস্ট পাঠায়। তিনি তা গ্রহণ করলে প্রায় দিন ম্যাসেঞ্জারে ছদ্মবেশ ধারণ করে তার সাথে কথাপোকথন চালিয়ে আসছিল। মাঝে মধ্যে অশ্লীল ভাষায় অন্তরঙ্গ পরিবেশ করতে চেয়েছিল। হঠাৎ করে ৪ আগস্ট ওই বৃদ্ধার ম্যাসেঞ্জারে তার মেয়ের একটি অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে দাবি তার কাছে আরও কিছু আপত্তিকর ছবি রয়েছে, যা প্রকাশ পেলে সামাজিকভাবে তাদের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়বে।
বৃদ্ধা সেই ছবিগুলো প্রকাশ না করার অনুরোধ রাখলে রেখা সাহা নামে ছদ্মবেশি নাহিদ তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। লোকলজ্জার ভয়ে আতঙ্কিত ওই বৃদ্ধা নাহিদের প্রস্তাব গ্রহণ করে অর্থ নেওয়ার জন্য তার বাসায় আমন্ত্রণ জানান। এসময় কথিত রেখা সাহা ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানায় তিনি রাজধানী ঢাকায় আছেন, সুতরাং অন্য একজনকে পাঠানো হবে। এর একদিনের মাথায় ৫ আগস্ট রাতে রনি হাওলাদার নামক ওই কিশোর আসমা আক্তারের বাসার সামনে গিয়ে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিয়ে তার আগমনের কথা জানায়।
একপর্যায়ে বাসায় আলাপচারিতায় ওই কিশোর জানায় তাকে রেখা সাহার বোন অনু সাহা পাঠিয়েছে টাকা গ্রহণের জন্য। কৌশলী আসমা আক্তার এসময় রেখা ও অনু সাহার সেলফোন নম্বর চাইলে তাকে ০১৭৭১-৫৩৫২৭৫ এই নম্বরটি দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। বৃদ্ধা টাকা দেওয়ার পূর্বে ওই নাম্বার নিশ্চিত হতে নিজের সেলফোন দ্বারা কল দিতেই ভেসে ওঠে তার স্নেহের পাত্র ‘প্রিয় নাহিদ’ নামটি। বিস্মিত হন আসমা আক্তার। তিনি জানান, তার মেয়ের চারিত্রিক বিষয়ে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রের ফাঁদ অনুমান করে অর্থ দিতে প্রস্তুত ছিলেন বটে। কিন্তু নাহিদ নামটি তার সেলফোনে ভেসে ওঠায় পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যান, তিনি কাছের লোক দ্বারা প্রতারিত হতে যাচ্ছেন। আগন্তক কিশোর রনি কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই বৃদ্ধা তাৎক্ষণিক কাউনিয়া থানা পুলিশের সহায়তা চান। পরক্ষণে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রনিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে সংবাদকর্মী নাহিদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অপচেষ্টার কাহিনী।
এরপরই শুরু হয় নাহিদের পক্ষে বরিশাল মিডিয়ার কয়েক ব্যক্তির সুপারিশ। একদিকে থানা পুলিশ, অন্যদিকে মিডিয়ার সেই ব্যক্তি বিশেষরা আসমা আক্তারকে পরামর্শ দেয় আইনের আশ্রয় না নিয়ে সমঝোতায় যেতে। বেশি বাড়বাড়ি করলে এর চরম খেসারত দিতে হবে, এমন হুমকি দিয়ে তটস্থ করে তোলে। কিন্তু অনঢ় আসমা আক্তার একদিন বাদে ৬ আগস্ট কাউনিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে নিজেই বাদী হয়ে নাহিদ ও রনির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাসহ প্রতারণার এই মামলায় নাহিদকে প্রধান ও রনিকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে।
কাউনিয়া থানা পুলিশ জানায়, শহরের পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা আটক রনি আদালতে জবানবন্দিতে সবিস্তার স্বীকার করেছে। কিন্তু আসমা আক্তার নিজেকে এখন নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। কারণ এ ঘটনা নিয়ে দুই যুবক যাদের একজন একটি আঞ্চলিক পত্রিকার সম্পাদক ও অপরজন অনলাইন পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে এক সাংবাদিক নেতা তাদের পাঠিয়েছেন এমনটি দাবি করে জানিয়ে দেয় এখনও সময় আছে সমঝোতার জন্য। এমন তথ্য জানিয়ে ওই বৃদ্ধা বলছেন, সেলফোনের মাধ্যমে এখনও তাকে শাসানো হচ্ছে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইতুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামচরি এলাকার বাসিন্দা বর্তমানে নগরীর গোড়াচাঁদ দাস রোডে ভাড়া বাসায় বাসবাসকারী নাহিদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে আসমা আক্তারের ধারণা, এই ঘটনার পেছনে বড় একটি চক্র জড়িত রয়েছে। নাহিদ গ্রেপ্তার হলেই চক্রটির মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণেই তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে তার অনুমান। পুলিশ কর্মকর্তাও এই বৃদ্ধার ধারণাকে অমুলক ভাবছে না।’
Leave a Reply