নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল মহানগরীতে বেপরোয়াভাবে চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্রাতিরিক্ত সিএনজি-মাহিন্দ্রা। এসব যানবাহনের কারণে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার শিকার মানুষদেরকে শারীরিক ও মানসিক ক্ষত নিয়ে চলতে হচ্ছে দীর্ঘদিন। অনেকে হারাচ্ছেন জীবন। আর এই পরিস্থিতির পিছনে বিগত দিনের সিটিবাস বন্ধ করে দেয়া, বাছবিচার ছাড়াই অতিরিক্ত রুট পারমিট (চলাচলের অনুমতি) প্রদান, দোষী চালকদের আইনের আওতায় আনতে না পারা ইত্যাদি কারু সামনে এসেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে সড়কে মাহিন্দ্রা-ইজিবাইকের বেপরোয়া হয়ে চলাচল বন্ধে সবরকম পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমলে নগরীতে দশটি মিনিবাসকে সিটি বাস হিসেবে পরিচালনা করা হতো। সেসময় প্রধানত সাধারণ রিকশা এবং সিটি বাসের মাধ্যমেই নগরবাসী স্বল্প দূরত্বে ভ্রমণ করতো। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সিটিবাস বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর নগরীতে চলাচলের জন্য বেবি ট্যাক্সির বদলে দ্রুতগামী মাহিন্দ্রা, ইজিবাইক এবং বর্তমানে সিএনজির অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এগুলো সবই প্রচ– দ্রুতগামী ছোট যান। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পুনরায় নগরীতে সিটি বাস চালু করার একটি পরিকল্পনা নিলেও এখনো তা বাস্তবতার রূপ দেখে নি। বরিশাল নগরীসহ আশেপাশের এলাকার সিএনজি-মাহিন্দ্রায় দুর্ঘটনার শিকার মানুষেরা প্রতিদিনই ভিড় করছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন জানান, দ্রুতগামী অটোরিকশা দুর্ঘটনায় সামান্য কাঁটাছেড়া থেকে শুরু করে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগীরাও প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে চিকিৎসারত অবস্থায় প্রাণ হারায়, অনেকে সারাজীবনের জন্য বহন করে পঙ্গুত্ব। যারা শারীরিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ হয় তারা আজীবন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে দুর্ঘটনার স্মৃতি মনে রেখে। এই চিকিৎসক আরো জানান, বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই দ্রুতগামী অটোরিকশা (মাহিন্দ্রা, সিএনজি ইত্যাদি) দুর্ঘটনায় আহত মানুষেরা হাসপাতালে আসছে। মাঝখানে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময়ে কিছুদিন এই সংখ্যা কম ছিল। তবে এখন পুনরায় তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্বেগজনক এই বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার সজাগ হওয়া প্রয়োজন। এদিকে সড়কে দ্রুতগামী অটো-রিকশাগুলোর বেপরোয়া হয়ে ওঠার মূলে দুটি কারু সামনে এনেছেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের বরিশাল আঞ্চলিক সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন শিপলু। তিনি বলেন, ‘যে সকল চালক দুর্ঘটনা ঘটায় তারা প্রভাবশালী অটোরিকশা মালিকের সহায়তা এবং আইনের তদারকির অভাবে পার পেয়ে যায়। শাস্তি না হবার কারণে বেপরোয়া ভাবে যান চালানোর অভ্যাস থেকে তারা (চালক) বের হতে পারে না। এছাড়া বিগত দিনে শহরে চলাচল করা সিটি বাস বন্ধ করে যাচ্ছেতাই ভাবে অটোরিকশার রুটে পারমিট দেয়া হচ্ছে। যার ফলে ঘনবসতিপূর্ণ বরিশাল নগরী মাহিন্দ্রা – ইজিবাইক দুর্ঘটনার অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে’। তবে গত আটমাস যাবৎ বরিশাল শহরে দ্রুতগামী অটোরিকশার দুর্ঘটনার হার কমে গেছে বলে জানান বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেবার পর থেকে নগরীতে দ্রুতগামীর অটোরিকশা বা এধরনের যানবাহনের দুর্ঘটনা বন্ধে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত গতি উপেক্ষা করে চালালে, গাড়ি চালানোর যথাযথ কাগজ না থাকলে কিংবা দুর্ঘটনা ঘটালে চালকদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে’। এক্ষেত্রে যানবাহনের মালিকের প্রভাব একদমই বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
Leave a Reply