নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সারাদেশের ধারাবাহিকতায় বরিশাল বিভাগের বাজারগুলোতে আলুর দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। আগুন লাগা দামের কারণে হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ ক্রেতারা। তবে সরকারি পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে দেশব্যাপী রয়েছে আলুর পর্যাপ্ত মজুদ। চাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার কিংবা হিমাগার মালিকদের অসাধুতা বৃদ্ধি করেছে আলুর দাম। তাই প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০ টাকা করে বিক্রি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের। বরিশালে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে তাই মাঠে নেমেছে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন। সরেজমিনে বরিশালের কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি আলুর মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে পাওয়া গেছে আঁতকে ওঠার মতো চিত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরীর বাজারগুলোতে সাদা আলুর কেজি প্রতি মূল্য ছিল স্থানভেদে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। গত মাসের (সেপ্টেম্বর) শেষদিকে এই মূল্য ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। অন্যদিকে লাল আলুর দাম গতকাল ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা। গত মাসের প্রথম দিকে এই দুই ধরনের আলুর দাম ছিল ৬০ টাকার ওপরে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে একজন চাষির প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে গড়ে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। আর আলুর মৌসুমে যখন হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে তখন প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৪ টাকা। প্রতি কেজি আলুর হিমাগার ভাড়া বাবদ ৩ দশমিক ৩৬ টাকা, বাছাই খরচ শূন্য দশমিক ৪৬ টাকা ও ওয়েট লস শূন্য দশমিক ৮৮ টাকা, মূলধন সুদ ও অনান্য খরচ বাবদ ব্যয় হয় দুই টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্য খরচ ধরে এক কেজি আলু হিমাগার পর্যন্ত সংরক্ষণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২১ টাকা।
এ ক্ষেত্রে হিমাগার পর্যায়ে বিক্রিমূল্যের ওপর ২ থেকে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ধরে হিমাগারের আলুর দাম ২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আলু সংরক্ষণকারীর লাভ হয় কেজি প্রতি দুই টাকা। অন্যদিকে আড়তদারি, খাজনা ও শ্রমিক খরচ বাবদ ৭৬ পয়সা খরচ হয়। সে ক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে দাম পড়ে ২৩ দশমিক ৭৬ টাকা। এর সঙ্গে মুনাফা ধরে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ভোক্তা পর্যায়ে সেটা ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। অন্যদিকে নির্ধারিত মূল্য হিসেবে প্রতি কেজি আলুর দাম হিমাগারে ২৩ টাকা,পাইকারিতে ২৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩০ টাকা দরে বিক্রি নিশ্চিত করতে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন সংস্থাটি। একই সঙ্গে উল্লিখিত দামে হিমাগার মালিক, পাইকারি বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতাসহ তিন পক্ষই যাতে আলু বিক্রি করে, সে জন্য কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সূত্রে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে পায় ১ দশমিক ৯ কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায়, গত বছর উৎপাদিত মোট আলু থেকে পায় ৩১ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু পরিমাণ আলু রপ্তানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই। এছাড়া সবজিটি মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করার বিষয়ে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করেছে হিমাগার মালিকদের। বরিশাল জেলা ও মহানগরের খুচরা বাজার গুলোতে আলুর বাজারদর তদারকি শুরু করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন,‘ খুচরা বাজারে আলুর প্রতি কেজি মূল্য যেন ৩০ টাকার বেশি না হয় সে ব্যাপারে আমরা নজরদারি শুরু করেছি। দ্রুতই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনাও শুরু হবে। কেউ যদি সরকার নির্ধারিত নির্দেশনা উপেক্ষা করে তাঁর বিরুদ্ধে নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা’। আর অধিক মূল্যে আলু বিক্রির পাঁয়তারা করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার। তিনি জানান, বিভাগের ছয়টি জেলার প্রশাসকেরা আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নির্দেশনা পেয়েছেন। সে অনুযায়ী আলুর ব্যবসায়ী, আড়তদার, হিমাগার মালিক কিংবা চাষি কেউ যদি মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত থাকেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
Leave a Reply