নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৪ এর সহকারীরেজিষ্ট্রার ডাঃ মাসুদ খানের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এছাড়া ওই চিকিৎসক নিজ স্বার্থ রক্ষায় ইন্টার্নদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের হুমকিজনক অপ্রচার চালাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তারা। এঘটনায় অনতিবিলম্বের কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে বৃহষ্পতিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসক ডাঃ তরিকুল ইসলাম, সজল পান্ডে, তৌহিদুল ইসলাম, তন্ময় চক্রবর্তী, রিজভীসহ তাদের সহকর্মী ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিবৃন্দ। স্মারকলিপি প্রদান শেষে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলেন, মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে যে হামলার কথা বলছেন হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৪ এর সহকারী রেজিষ্ট্রার ডাঃ মাসুদ খান তা আদৌ সত্য নয়। ওই দিন তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র। তাও শুধু ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে।
তারা বলেন, মূলত ডাঃ মাসুদ খান কমিশন বানিজ্য টিকিয়ে রাখতে রোগীদের পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালের বাহিরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করছেন। আর রোগীরা সেখান থেকে পরীক্ষা না করালে সে রিপোর্ট তিনি দেখতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং রোগীর স্বজনদের সাথে অশোভন আচরণ করেন। গরীব রোগীদের সাথে এমন আচরণের জ্বের ধরেই ইন্টার্নদের সাথে তার মতবিরোধ রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একজন ইন্টার্নের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে কথা বলতে গেলে ডাঃ মাসুদ খান ইন্টার্নদের সাথে অশোভন আচরণ করনে। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এই কমিশন বানিজ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ডাঃ মাসুদ খান ওই ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডাঃ জাহিদ স্যারকে তার নিজ অফিস
কক্ষে অবরুদ্ধ ও প্রাণ নাশের হুমকিও দেন।
এ নিয়ে কথা বলতে গিয়েই মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) তার সাথে ইন্টার্নদের কথা কাটাকাটি হয় বলে জানান ইন্টার্ন চিকিৎসক নেতা ডাঃ তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই দিন কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি। আর তিনি যেভাবে বলছেন, সেভাবে ঘটনা ঘটেলে তিনি কিভাবে সুস্থভাবে তার সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এতো লোকের হামলা কেই কেনই বা দেখবে না।আবার তিনি রিজভি নামে একজনের কথা যে বলছেন ৪৭ তম ব্যাচে ওই নামে কোন ছাত্র নেই। সেই রিজভি নামে যাকে আমরা চিনি তিনি ওইদিন হাসপাতালেই ছিলেন না। ইন্টার্নরা বলেন, ডাঃ মাসুদ যে নিজেকে শিক্ষক দাবি করছেন, আমাদের ছাত্র বলছেন তাও ঠিক নয়। সহকর্মী হিসেবে তার সাথে আমরা রোগীদের চিকিৎসা দেই। তাই তার অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে ইর্ন্টানরা।
তারা বলেন, ডাঃ মাসুদ খান ইন্টার্নদের সাথে নানানভাবে অত্যাচার করছেন। যেমন ৪ জন মেয়ে ইন্টার্নের আটকে থাকা বেতন হাসপাতাল পরিচালক দেয়ার অনুমতি দিলেও ডাঃ মাসুদ খান ক্ষমতার অপব্যবহার করে তা আটকে রেখেছেন। আবার নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ ইন্টার্নদের সাথে অশালীন আচরণ, হাসপাতাল কর্মচারীদের সাথে দুরব্যবহারও করে আসছেন। আর এসব অপকর্ম ধামাচাপা দিতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও সাধারণ শিক্ষার্ধীদের বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যে তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যম ব্যবহার করে হুমকি ও অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডাঃ সজল পান্ডে। তিনি বলেন, এতে গোটা দেশের চিকিৎসক সমাজ আমাদের খারাপ ভাবছে। তারপরও আমরা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে তাকে হেয় করে কোন ধরণের মন্তব্য করিনি। এখন মিথ্যচারের বিষয়টি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যে ইন্টার্নদের চরিত্রহরণ করা হচ্ছে। তাই আমরা এর প্রতিকার চেয়ে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মূল ঘটনার রহস্য উদঘাটনের আশা রেখে হাসপাতাল পরিচালক স্মারকলিপি দিয়েছি। তিনি আমাদের পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।
এদিকে স্মারকলিপির বাহিরে ইন্টার্নরা ডাঃ মাসুদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে চলা এবং তার রাজনৈতিক মতাদর্শ খতিয়ে দেখার আহবান জানান। সেইসাথে কমিশন বানিজ্যের অর্থের উৎস ও খরচের খাতকেও খতিয়ে দেখার আহবান জানান। এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বলেন, ইন্টার্নদের কথা আমরা শুনেছি, তারা স্মারকলিপি দিয়েছে। যেখানে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে যাঃ মাসুদের বিরুদ্ধে। যা খতিয়ে দেখা হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ডাঃ মাসুদ তার ওপর হামলার যে অভিযোগ তুলেছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেণ, পুরো ঘটনায় সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আনোয়ার হোসেন বাবলুকে প্রধান করে একটি তিন সদস্যদের কমিটি আজ গঠন করা হয়েছে। যে কমিটি পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে এবং ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরের দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অফিস কক্ষে ডাঃ মোঃ মাসুদ খান হামলার শিকার হন বলে দাবি করেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে চিকিৎসকদের সম্পর্কের অবনতির সূত্র ধরে এই হামলা হতে পারে বলে দাবি করে সেসময় তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।
Leave a Reply