বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের ৫ সদস্যের বরিশাল মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন গৌরনদীতে ইউএনওর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে খালের কুচুরিপানা ও ময়লা পরিস্কার করল বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা বর্নাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে গৌরনদীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত আমাদের নেতা তারেক রহমান একটি সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চান-জহির উদ্দিন স্বপন মেয়র হারিছ গ্রেপ্তারের খবরে গৌরনদীতে সাধারন মানুষের উল্লাস ফাঁসির দাবিতে বিএনপির বিক্ষাভ মিছিল গৌরনদীতে এইচপিভি টিকা দান ক্যাম্পেইনের শুভ উদ্বোধন কাশিপুরের ড্রেজার ব্যবসায়ী সুমনের অপকর্মে কেউ খুন হলে দায় নেবে না বিএনপি
ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবেন

ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবেন

কবির হোসেন:

আইন পেশায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ছিলেন অনন্য। আইনি লড়াই করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষে। এ ছাড়া বহু সাংবিধানিক ও আইনি জটিলতা নিরসনে উচ্চ আদালতে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন। রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে অর্জন করেছেন সর্বজনের শ্রদ্ধা। আইন পেশার বাইরেও সমাজের নানা ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে। জীবনের উপার্জিত অর্থের প্রায় সবই ব্যয় করেছেন দুস্থ মানুষের কল্যাণে, সমাজসেবায়। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু কোনো সম্মানী ভাতা নেননি। গতকাল বিরল এই উজ্জ্বল নক্ষত্র বিদায় নিয়েছেন নশ্বর পৃথিবী থেকে। তবে তার মহৎ কর্ম আর সততার গুণে ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। চাপের মুখেও বিতর্ক আর যুক্তিতর্কে ছিলেন অনড়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তি করেছেন সাহসের সঙ্গে। মোকাবিলা করেছেন দৃঢ়চিত্তে।

২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে দুই নেত্রীর মামলা পরিচালনা করেছেন অকুতোভয় প্রবীণ এই আইনজীবী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার দুরভিসন্ধী বলতে গেলে তিনি একাই রুখে দিয়েছেন। মতাদর্শের দিক থেকে দুই মেরুর দুই রাজনৈতিক দলের প্রধানের পক্ষে একসঙ্গে মামলা পরিচালনার ইতিহাস আইন পেশায় বিরল। বাংলাদেশের আর কোনো আইনজীবীর ক্ষেত্রে এমন নজির নেই। তবে তার শেষ আক্ষেপ ছিল, দেশের এক কঠিন সংকটময় পরিস্থিতিতে দুই নেত্রীকে একসঙ্গে বসাতে না পারার।

রাষ্ট্রীয় কর্মকা- কিংবা রাজনীতিবিদদের কাজে বা কথায় উল্টোপাল্টা কোনো কিছু হতে দেখলেই সরব হয়েছেন রফিক-উল হক। দুই নেত্রীর পক্ষে মামলা লড়েছেন, কিন্তু আদালতের বাইরে তাদের সমালোচনা করতে কখনো পিছপা হননি। শুধু সমালোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, সঙ্গে বাতলে দিয়েছেন উত্তরণেরও পথ। সংকটে এগিয়ে এসেছেন অভিভাবকের মতো। এ জন্য তাকে অনেক সময় তীর্যক মন্তব্যও শুনতে হয়েছে। তার পরও থেমে থাকেননি নির্ভীক এই আইনজীবী।

জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের ব্যাপারে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে পেরেছি। তার কন্যা শেখ হাসিনাকেও ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেল থেকে মুক্ত করে এনেছি। আবার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াকেও জেল থেকে মুক্ত করতে পেরেছি। এটাই বড় পাওয়া।’

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক উচ্চ আদালতকে প্রজ্ঞাপূর্ণ মতামত দিয়ে সহযোগিতা করে অনেকবার হয়েছেন আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি)। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশে সত্যিকারের আইনের বিচার প্রতিষ্ঠা হলে দুর্নীতি থাকবে না। সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাবে।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক দেশ ভাগের আগে ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব থেকে শিক্ষাজীবনের প্রায় পুরোটাই কলকাতায় কেটেছে। লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করে তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। জীবনের দীর্ঘ পথচলায় শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের নাগরিক হওয়ার বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি।

রফিক-উল হক কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংস্পর্শে আসেন। ইসলামিয়া কলেজের বেকার হোস্টেলে যে কক্ষে বঙ্গবন্ধু থাকতেন তার পাশের কক্ষেই থাকতেন রফিক-উল হক। এর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও কারমাইকেল হোস্টেলে তিনি কিছুদিন বঙ্গবন্ধুর সাহচর্যে ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে বার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন তিনি।

১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ষষ্ঠ অ্যাটর্নি জেনারেল। বিরল ঘটনা হচ্ছে, এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি কোনো সম্মানী নেননি। ৬০ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি কখনো কোনো রাজনৈতিক দল করেননি। তবে পেশাগত জীবনে রাজনীতি না করলেও রফিক-উল হক ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। কলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি যুব কংগ্রেস করতেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। তখন ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন সেন্ট্রাল যুব কংগ্রেসের সভাপতি। কলকাতায় পড়ার সময় তার বন্ধু ছিলেন ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।

তিনি হিন্দু আইন নিয়ে বার-অ্যাট-ল’ করেন। সেখানে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এর পরই হিন্দু আইন পাঠ্য করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং হিন্দু আইনের ক্লাস নেওয়ার জন্য তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন এই কৃতী আইনজীবী।

ব্যারিস্টার হক নিজে রাজনীতি না করলেও নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা সবাই তাকে কাছে টেনেছেন। জাতীয় নেতাদের কাছে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ- সবার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

জীবনের উপার্জিত অর্থের প্রায় সবই ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণ ও সমাজসেবায়। তার এই উদ্যোগকে বিরল বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন আইন অঙ্গনে তার সমসাময়িকরাও। তিনি ছিলেন এক অনন্য সমাজসেবী। নীরবে কাজ করেছেন মানুষের জন্য। বারডেম, আদদ্বীন, আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, গাজীপুরে ১০০ শয্যার সুবর্ণ হাসপাতাল, ঢাকার হার্ট ফাউন্ডেশনসহ ২৫টির বেশি হাসপাতাল, এতিমখানা, মসজিদ ও মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন ব্যারিস্টার হক।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক স্টোমাক ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার স্টোমাক অপসারণ করা হয়। একই সঙ্গে বাঁ পাঁজরের তিনটি হাড়ও অপসারণ করা হয়। ২০১৭ সালে হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পর থেকে তার চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ে। এ কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতেন না। খ্যাতিমান মানুষটির শেষ দিনগুলো বিছানায় শুয়েই কাটে। চলাফেরা করতে হলে হুইলচেয়ার আর গৃহকর্মীরাই ছিল তার ভরসা।

রফিক-উল হক সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিনি সমসাময়িক কালের একজন অত্যন্ত উঁচুমানের আইনজীবী; যাকে বিচারক, আইনজীবীসহ এই পেশার সর্বস্তরের ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা-সম্মানের চোখে দেখেন। তিনি এই অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা কোনো না কোনোভাবে পরিচালনা করেছেন। ওইসব মামলায় বিভিন্ন আইনের ইন্টারপ্রিটেশন (বিশদ ব্যাখ্যা) দেওয়া হয়েছে এবং আইনের ভূমিকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দেশে ডেভেলপমেন্ট অব ল’তে আইনজীবী হিসেবে এক বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ব্যক্তি হিসেবেও তিনি অত্যন্ত সদয় ও ¯েœহপরায়ণ। তিনি আরও বলেন, ব্যারিস্টার হক তিনি জীবনে অনেক টাকা উপার্জন করেছেন। আবার সেই অর্থ অনেক জনহিতকর ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। তার কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠান আছে। দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অত্যন্ত বিরল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com