নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) চতুর্থ দিনের মতো চলছে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট। প্রায় দেড়শ’ ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে না ফেরায় এক হাজার শয্যার দক্ষিণাঞ্চলের এই হাসপাতালটিতে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। ৫ শ’ শয্যার হাসপাতালের ক্যাটাগরিতে ২২৪ টি পদের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন ৯১ জন। বাকি ১৩৩টি পদ শূন্য রয়েছে। সেই অবস্থার উন্নতি না করেই হাজার শয্যাায় উন্নিত করায় পূর্বে থেকেই ছিল নানান অভিযোগ। তার ওপরে বর্তমানে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে। এমনকি বিগত তিনদিনে পর্যায়ক্রমে হাসপাতালে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। মারা যাওয়া রোগীর অধিকাংশের স্বজনদের দাবী, চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও উড়িয়ে দেননি রোগীর স্বজনদের অভিযোগ।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন জানিয়েছেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে একটি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি সুষ্ঠ সমাধান দ্রুতই সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ইন্টার্নদের কর্মবিরতির কারনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে এটি সত্য। ডাক্তার না ডিউটিতে থাকলে রোগীর মৃত্যুর পরিমান বৃদ্ধি পাবে এটি অস্বাভাবিক নয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২ অক্টোবর কাউনিয়া থানার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা সেকেন্দার আলীর স্ত্রী নাসিমা বেগম বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে পেপটিক আলসারে ভুগছিলেন নাসিমা বেগম। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে ৩০ অক্টোবর তাকে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক ওই নারীর উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গুরুত্বর অসুস্থ নাসিমাকে। প্রথমে তাদের মেডিসিন বিভাগের ৫ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হাতে জখম থাকায় নাসিমা বেগমকে ১ নভেম্বর সার্জারি বিভাগের ৯ নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। সেকেন্দার আলী জানান, শনিবার ইমার্জেন্সীতে নিয়ে আসার সময়ে ডাক্তার যে ওষুধ দিয়েছে সেই ঔষধই টানা তিন দিন চলেছে। ওয়ার্ডে রোগী নেওয়ার পর থেকে কোন ডাক্তার দেখতে আসেননি। নার্সদের কাছে পরামর্শ করতে গেলে তারা খারাপ আচরন করেছেন। মৃত নাসিমা বেগমের পুত্রবধূ সুমাইয়া বেগম বলেন, অনেক অনুরোধ করেও কোনো ডাক্তার, নার্সকে পাওয়া যায়নি রোগীকে দেখার জন্য।
শুক্রবার রাতে হাসপাতালের সার্জারী-২ (পুরুষ) ওয়ার্ডে ভর্তি হন মোটরসাইকেলে গুরুতর আহত গনি সরদার। ওই ওয়ার্ডের নার্সরা জানিয়েছেন, উজিরপুর থেকে আসা রোগীকে তারা আসার পর থেকেই চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় সঠিক চিকিৎসা দেওয়া যায়নি। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টায় রোগী গনি সরদার মারা যান। হাসপাতালের মেডিসিন (মহিলা) ওয়ার্ডে মারা যান নুর বানু নামে আরেক গৃহবধূ। জানা গেছে, নুর বানু অ্যাজমা রোগী ছিলেন। তার স্বজন রমিজ আলী বলেন, তারা আগৈলঝাড়া থেকে এসেছিলেন। কিন্তু সারারাত কোনো চিকিৎসা না পেয়ে ওই রোগী মারা যান। হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা পারভীন বলেন, শনিবার ১০ জন, রবিবার ১৭ জন এবং সোমবার ১৯ জন রোগী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। অর্থাৎ, ৩১ অক্টোবর (শনিবার) ইন্টার্নদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ার দিন থেকে তিন দিনের হিসেবে বলছে মৃত্যুর সংখ্যা প্রত্যেকদিন বাড়ছে। মারা যাওয়া রোগীর স্বজনরা অধিকাংশ মৃত্যুর জন্য চিকিৎসা না পাওয়াকে দায়ী করেছেন। প্রসঙ্গত, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশন বাণিজ্য নিয়ে ২০ অক্টোবর হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মাসুদ খানকে কক্ষে আটকে মারধর করেন ইন্টার্ন চিকিৎসক নো ডাঃ সজল পান্ডে ও তারিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় ডাঃ মাসুদ খান ১০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তার প্রতিবাদে ইন্টার্নরা কর্মবিরতির ডাক দেন।
Leave a Reply