নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ১৯৬৮ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী চলতি বছর ৫২ বছর পূর্তি হল শেবাচিম’র। তবে এই ৫২ বছরে হাসপাতালের অবকাঠামোগত কিছুটা উন্নয়ন ঘটলেও জনবল সংকটের বিষয়টি এখনও বিদ্যমান। অভাব রয়েছে দক্ষ জনবলেরও। আর এ কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার মাসুল গুনতে হচ্ছে রোগীদের। জনবল সংকটের কারণে অন্যান্য চিকিৎসকদের হাসপাতালের বহির্বিভাগের যেমন বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, তেমনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও অন্য বিভাগে দায়িত্ব পালনেরও অভিযোগ রয়েছে। ফলে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন কাঙ্খিত সেবা থেকে। তবে বিষয়টি স্বীকার করলেও যথারীতি জনবলের অভাবকেই দোহাই দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিমের বহির্বিভাগ থেকে গড়ে প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার রোগী সেবা গ্রহণ করেন। আর তাদের সেবা প্রদানে এখানে রয়েছে অন্তত ১৬ টি বিভাগ। এসব বিভাগগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই সংশ্লিষ্ট রোগের সেবা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে ব্যতিক্রম কেবল চক্ষু বিভাগ। শেবাচিমের এই চক্ষু বিভাগে বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দু’জন। এরমধ্যে বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ। বেশ কিছু দিন যাবত এই গাইনী চিকিৎসকই বহির্বিভাগে রোগীদের প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। গাইনী বিশেষজ্ঞ হয়েও কিভাবে তিনি চক্ষু রোগের চিকিৎসা দেন – এমন প্রশ্ন রোগী ও স্বজনদের। এদিকে চোখের চিকিৎসা গ্রহণে সময় ক্ষেপণের অভিযোগও করেছেন রোগীরা। প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণে ক্ষেত্রবিশেষে রোগীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত। ফলে সেবা গ্রহণে যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা। বিশেষ করে জেলা-উপজেলা থেকে আগত রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের বাসিন্দা রানা সরদার। স্ত্রীর চোখের চিকিৎসা নিতে এসেছেন শেবাচিমে। গত রোববার এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, সেবার মান এবং আর্থিক দিক বিবেচনায় হাসপাতালে এসেছি। টিকিট কাটার পর বহির্বিভাগের একজন নারী চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। এছাড়া দুজন নার্স দায়সারাভাবে রোগীর চশমার পাওয়ার পরীক্ষা করেছেন। পরবর্তীতে চিকিৎসকের সহকারী আমার স্ত্রীকে আগামী শনিবার এসে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়টি অবহিত করেছেন। রানা বলেন, আজ মাত্র রোববার (১ নভেম্বর)। আগামী শনিবার পুনরায় তার স্ত্রীকে হাসপাতালে আসতে হবে। এভাবে বারংবার আসা-যাওয়া যেমন ঝক্কির ব্যাপার তেমনি রয়েছে বাড়তি খরচও।
আর এমনই যদি হয় তাহলে শেবাচিমের চিকিৎসা আমাদের কোন উপকারে লাগলো? এর চেয়ে প্রাইভেট চেম্বারে গেলে উপকৃত হতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। রানার এমন মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে একাধিক রোগী এবং স্বজন এ অবস্থারোধে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান ডা. ডিবি পাল বলেন, হাসপাতালে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কিছুদিন পূর্বেও এখানে ৫ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করতেন। তবে পদোন্নতিসহ অন্যান্য কারণে চিকিৎসকের এই সংখ্যা কমে মাত্র একজনে এসে ঠেকেছে। আর তাই রোগীচাপ সামলাতে বহির্বিভাগের সেবা নিশ্চিতে ভিন্ন ডিগ্রিধারী চিকিৎসককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে একজন আরএস হিসেবে এই দায়িত্ব পালনের অধিকার তার রয়েছে। ডা. ডিবি পাল বলেন, চক্ষু বিভাগে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে শীঘ্রই এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই চিকিৎসক। বিষয়টি অবহিত করে হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত তুলে বক্তব্য প্রদানে বিরত ছিলেন।
Leave a Reply