নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের আবহাওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে শীতের আগমনী বার্তা। তারতম্য দেখা দিচ্ছে দিন ও রাতের তাপমাত্রায়। সাথে বাড়ছে শীতবাহিত রোগ। সাধারণ ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আর একে পুঁজি বানিয়ে ফায়দা লুটছেন নগরীর কতিপয় ওষুধ দোকানি। সাধারণ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে ভুল বুঝিয়ে গছিয়ে দেয়া হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় এবং উচ্চমূল্যের ওষুধ। অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সরকারি নির্দেশনাও। সাধারণত নি¤œ শ্রেণির নিরক্ষর মানুষের অজ্ঞতার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন এসব ওষুধ দোকানিরা। আর মাত্রাতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় এই ওষুধ সেবনে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিরও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণে নগরীর বিভিন্ন অলিগলির ফার্মেসিগুলোতে দেখা গেছে এমনই চিত্র। অলিখিত ডাক্তার বনে যাওয়া এসকল ওষুধ দোকানিরা আক্রান্ত রোগীদের নিজেরাই বলতে গেলে একরকম ‘ব্যবস্থাপত্র’ দিচ্ছেন রোগ উপশমে। কিছু ক্ষেত্রে স্বীকৃত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই গছিয়ে দেয়া হচ্ছে উচ্চমূল্যের অ্যান্টিবায়োটিক।
জ্বরে আক্রান্ত মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে এসছেন চাঁদমারীর বাসিন্দা দিনমজুর বাবুল। আলাপকালে তিনি জানান, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবার আর্থিক সংগতি তার নেই। তাছাড়া এসব ছোট-খাট রোগের জন্য দোকানিদের দেয়া ওষুধেই রোগ সেরে যায়, পূর্বেও সেরেছে। দোকানি কি কি ওষুধ দিলেন, এসব ওষুধের প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুল বলেন, প্রায় এক দশমাংশ অর্থ ব্যয়েই যখন রোগী সুস্থ হচ্ছে তখন এমন বাছ-বিচারের দরকার নেই।
পলাশপুরের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আকলিমা বেগমের বক্তব্যও প্রায় একই। আকলিমা আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের বিষয়টি অনেক ঝামেলার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যয় বহুলও।
ওই এলাকার হাসিব ফার্মেসির মো. আতাউর দাবি করেন, দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতায় ছোট-খাট রোগ উপশমে কার্যকরী ওষুধ তিনি নিজেই দিতে পারেন। এজন্য ফি দিয়ে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন নেই। তবে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তদের চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া তাঁর বিক্রিত উচ্চমূল্যের অ্যান্টিবায়োটিক সেবন কতটা প্রয়োজন এবং নিরাপদ এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় ওষুধনীতি-২০১৬’ খসড়া অনুমোদন পেয়েছে। ওষুধনীতিতে জ্বর, সর্দি, মাথা বা পেট ব্যথার মতো রোগের ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন সমস্যার ওষুধ, ঘুমের ওষুধের মত স্পর্শকাতর ওষুধ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যথেচ্ছ বেচা-বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এব্যাপারে ডা. সমীরণ চক্রবর্তী বলেন, শীত মৌসুমে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হলে সাধারণ ওষুধ সেবন এবং পরিমিত বিশ্রামে ৩-৫ দিনের মধ্যে সুস্থ হওয়া সম্ভব। বিশেষ অবস্থা এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া উচ্চমূল্যের অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কোনো প্রয়োজনই নেই। নাট্য ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ জানান, সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে এক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানী ওষুধ দোকানি ভুল বুঝিয়ে মাত্রাতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ওষুধসহ উচ্চ মূল্যের অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করছেন। তিনি আরও বলেন, ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনও ব্যাপক মাত্রায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন এখন দেশে ‘অ্যালার্মিং’ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক রেজিস্টার্ড দিবসে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এমনকি ওষুধ বিক্রয়ের দোকানগুলোতেও জনসচেতনামূলক পোস্টারিং করা হয়েছে। তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির নামে অসাধু দোকানিদের এ ধরনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন।
Leave a Reply