নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় তাল মিলিয়ে বরিশাল বিমান বন্দরও ব্যাপক আধুনিকায়নের ছোঁয়া পেয়েছে সেই সাথে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ছে। বেড়েছে এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে এত নিরাপত্তা থাকা সত্তেও ব্যাপক নিরাপত্তা ঝুঁকতে রয়েছে দেশের অভ্যন্তরীন রুটের বিমান চলাচলরত বরিশাল বিমান বন্দর। মুল প্রবেশদ্বার এবং বিমান বন্দরের ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে একাধিক নিরাপত্তা চেকিংয়ের মধ্যদিয়ে প্রবেশ করা হচ্ছে। কিন্তু সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে যাওয়া সহ উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে সীমানাপ্রচীর থাকলেও তার নিচ দিয়ে অনায়াসে মানুষ ঢুকে পরছে রানওয়েতে। এমনকি সীমানা প্রাচীরের নিচে মাটি না থাকায় প্রায়ই কুকুরসহ একাধিক প্রাণী ঢুকছে রানওয়েছে। যার ফলে ফ্লাইট উঠানামায় ব্যাপক ঝুঁকিতে পড়ছে বিভিন্ন বিমানসংস্থা।
তথ্যমতে, আকাশ থেকে শস্যখেতে কীটনাশক ছিটানোর কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৬৩ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের ‘প্ল্যান্ট “প্রোটেকশন” বন্দর হিসেবে দুই হাজার ফুট রানওয়ে নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী ১৯৮৫ সালে এটিকে বিমানবন্দরে রূপান্তর করা হয়। অবশেষে ১৯৮৫ সালে ১৬৩ একর জমিতে ছয় হাজার ফুট দীর্ঘ ও ১০০ ফুট প্রস্থের এ বিমানবন্দরটি ৪ মিলিয়ন টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিলো। ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস এর
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বেসরকারী বিমান সংস্থা এ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স বিমানবন্দরে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে। পরে কয়েক দফা বিমান উঠানামা বন্ধের পর আবার পুরোদমে চালু হয়েছে এ বিমানবন্দরটি। বর্তমানে এ বিমান বন্দরে প্রতিদিন ৬ টি ফ্লাইট ওঠানামা করছে।
কিন্তু বর্তমান বিমানবন্দরের একাধিক ফ্লাইট উঠানামা করলেও এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক বলেন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে বেড়িয়ে এসেছে। সর্বশেষ গেল (৩০ নভেম্বর) সোমাবার ৪ টা ২৫,মিনিটের দিকে রাওয়ের উত্তরপ্রান্ত থেকে হটাৎ করে অজ্ঞাত একাধিক ব্যক্তি রানওয়েতে ঢুকে পরেন। এদিকে ঢাকা থেকে ৩ টা ৫৮ মিনিটে বেসরকারী বিমানস্থা ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট(ফ্লাইট নম্বর-১৭৩) ঢাকা থেকে বরিশাল বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে টেক-অফ করে ৪ টা ৩৫ মিনিটে বরিশাল বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং করা কথা। কিন্তু অজ্ঞাত ব্যক্তিদের রাওয়েতে অবাদ প্রবেশের ফলে উত্তর-পূর্ব প্রান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তকর্মীরা বিমানবন্দরের কন্টোল টাওয়ারে বার্তা প্রেরণ করেন। কন্টোল টাওয়ার থেকে বিমানের ককপিটে পাইলটকে কিছুক্ষন পরে অবতরনের নিদের্শনা প্রদান করেন। এরই মধ্যে ইউএস বাংলার ১৭৩ নম্বর ফ্লাইটি বিমান বন্দরের কাছাকাছি চলে আসেন। পাইলট তাৎক্ষনিক পরিস্থিত প্রতিকূলে বুঝতে পেরে বিমান বন্দর রানওয়ে বরাবর আকাশে ঘুরতে থাকে।
এর ফলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১০ মিনিট পরে ১৭৩ নম্বর ফ্লাইটটি রানওয়েতে নিরাপদে অবতরণ করেন। অপরদিকে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের রানওয়ে থেকে রেড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীরা। পরবর্তীতে বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বরত পুলিশ,আনসারসহ বিভিন্ন নিরাপত্তার দায়িত্বরতা সেখানে পৌঁছানেরা আগেই অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এ বিমান বন্দরের এখনও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সীমানা প্রাচীর। তিনি অচিরেই সীমানা প্রাচীর সমস্যা সমাধান করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরো জোরদার করার দাবি করেন।
বিমান অবতরনের সময় অজ্ঞাত ব্যক্তির রানওয়েতে ঢুকে পরার ফলে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক আঃ রহিম তালুকদার উর্ধ্বত্বন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তিনি রহমতপুর থেকে বাবুগঞ্জ যাওয়ার সড়কে নিরাপত্তাপ্রাচীর খুবই অরক্ষিত বলে স্বীকার করেন। নিচ দিয়ে লোকজন ঢুকে পড়ে। এটা উঁচু করা এবং নিচে মাটি ফেলে ভরাট করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
বেসরকারী বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বরিশাল ষ্টেশন-ইন-চার্জ মোঃ সাইফুর রহমান ঘটনার সত্যাতা স্বীকার করে বলেন, এধরনে পরিস্থিতিতে পাইলটের মুভমেন্ট অন্যদিকে প্রভাবিত হলে বড় ধরণের দূর্ঘটনা,সিডিউল বিপর্যয়,জ্বালানী খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখীন হতে পারে।
Leave a Reply