বরগুনা প্রতিনিধি ॥ ‘মোরা স্যার কাম না করলে খামু কী? কেউ তো মোগো লইগা খাওন বাড়ি লইয়া আয় না। বেয়ান (সকাল) হইতে রাইত পর্যন্ত হগোল দোহানে পানি দিয়া যে টাহা পাই হেইয়া দিয়া চাউল কিনি আর হেইতেই মোর সংসার চলে’– কথাগুলো সূর্যভানু বেগমের। থাকেন বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। আগে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন সূর্যভানু। এখন পানি টেনে সংসার চালান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের মুদি মনোরহী, ফলের দোকান, চা-পান ও হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ২ শ বিভিন্ন দোকানে কলসিভর্তি পানি টানেন। একটা ভ্যানে করে টিউবওয়েল থেকে ৮-১০টি কলসি নিয়ে দোকানদারের চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে হয়। কোনো দোকানে টিউবওয়েলের পানি আবার কোথাও খালের পানি দেন। কাজের জন্য সময়মতো খেতেও পারেন না। কখনো সকালের খাবার দুপুরে, আবার দুপুরের খাবার রাতে খেতে হয়। বাসস্ট্যান্ডের দোকানগুলোয় সূর্যভানুর পানিই একমাত্র ভরসা। ভাই ভাই সেলুনের উজ্জল শীল জানায়, বাসস্ট্যান্ডের সকল দোকানে একমাত্র পানি দেয় সূর্যভানু। এ জন্য শখ করে তাকে পানিমন্ত্রী বলে ডাকি। হোটেল মালিক শওকত হোসেন জানায়, সূর্যভানু অসুস্থ থাকলে আমাদের নিজেদের পানি আনতে হয়। এ জন্য একমাত্র ভরসা তিনি। ১১ বছর আগে সূর্যভানুর স্বামী আব্দুস ছোমেদ মারা যান। টানাপড়েনের সংসারে ছেলে মো. শাহীন (২১) মাত্র চতুর্থ শ্রেডু পর্যন্ত আর মেয়ে মুন্নি (১৯) পঞ্চম শ্রেডু পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছেন। গত ৩ বছর পূর্বে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। পানি টেনে কলসপ্রতি পাঁচ টাকা করে আয় করেন তিনি। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তাঁর। তবে সূর্যভানু বললেন, মুই অ্যাহন আর আগের মতো কাম করতে পারি না। সূর্যভানু বয়সের কারণে এবং বিভিন্ন রোগে অসুস্থভাবে কাজ করে সংসার চালান। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর মো. নাসির উদ্দিন ফকির বলেন, সূর্যভানুকে সাহায্য করা হবে।
Leave a Reply