বিদেশ ডেস্ক ॥ হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে কটাক্ষ করে ফ্রান্সে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে শুরু হওয়া ফ্রান্সবিরোধী সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে দেশটির সরকার শুক্রবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে (পিটিএ) চিঠি দিয়ে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউবের মতো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পিটিএ-কে দেওয়া চিঠিতে বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পিটিএ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়ার পর সংস্থাটির পক্ষ থেকে এসব সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পিটিএ একটি অফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, ‘জনসাধারণের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কিছু সামাজিক মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে প্রবেশাধিকার অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ তবে বিকেল তিনটায় সরকারি ওই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর অবশ্য আংশিকভাবে আবার এসব সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো চালু করে দেওয়া হয়েছে বলে এক অনলাইন প্রতিবেদন জানিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে পাকিস্তানের হাজার হাজার ইসলামপন্থির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পাকিস্তানের কট্টরপন্থী দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) এক শীর্ষ নেতাকে আটকের ঘটনায় দেশজুড়ে সেই সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করার এই সিদ্ধান্ত। এ সপ্তাহে দেশটির প্রধান কয়েকটি শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে টিএলপি–সমর্থকদের সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। দেশজুড়ে চলমান ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ ও সহিংসতার জেরে ইসলামি দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানকে (টিএলপি) নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গত সোমবার লাহোর থেকে টিএলপি–প্রধান আল্লামা সাদ হুসাইন রিজভিকে গ্রেপ্তারের পর বিক্ষোভ থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রান্সে ইসলামবিরোধী ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের ঘটনার জেরে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবি নিয়েছিলেন আল্লামা রিজভি। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে পাকিস্তানে ফ্রান্সবিরোধী সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে ইসলামাবাদের ফরাসি দূতাবাস পাকিস্তানে অবস্থানরত ফরাসি নাগরিকদের সাময়িকভাবে দেশটি ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানে ফরাসি স্বার্থের জন্য গুরুতর হুমকির নিয়ে সতর্ক করেছে। উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ দিকে ফ্রান্স ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নবী মোহাম্মদ (স.) এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শন করাকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সে সময় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে পাকিস্তানসহ গোটা মুসলিম বিশ্বও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল।
Leave a Reply