বিদেশ ডেস্ক ॥ গভীরভাবে রক্ষণশীল পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা বা ব্লাসফেমি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এখানে নিছক অভিযোগই বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং জনতাকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়। মানবাধিকার প্রচারকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের শিকার করতে ব্লাসফেমি আইন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তা বাতিল করার আবেদন জানাচ্ছেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পাকিস্তানের লাহোরের একটি এনজিও সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস (সিএসজে) তথ্য প্রকাশ করেছিল যাতে দেখা যায় যে পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনের অপব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে। তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এডভোকেসি গ্রুপটি লিখেছে, ১৯৮৭ থেকে ২০২০ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮৫৫ জনকে ধর্ম সম্পর্কিত অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই আনা হয়েছে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ২৯৫বি, সি থেকে ২৯৮সি আইনে যা ব্লাসফেমি আইন নামে পরিচিত। দেশটিতে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার খ্রিস্টানরা পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। ব্লাসফেমি আইনের বেশি শিকার হয়েছে তারাই। ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ওপেন ডোরস ইউএসএ তাদের ২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড ওয়াচ লিস্টে পাকিস্তানকে খ্রিস্টানদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ নির্যাতনকারী হিসাবে পঞ্চম স্থান দিয়েছে। ১৯৯৭ সালে মুলতান বিভাগের দুইটি গ্রাম লুট করে জ্বালিয়ে দেয় কমপক্ষে ২০ হাজার মুসলিম। পুলিশও তাদের সহায়তা করেছে। এরপর থেকে খ্রিস্টান সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের বেশ কয়েকটি ঘটনা জানা গেছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, কমপক্ষে ৮০ জনকে পাকিস্তানে ব্লাসফেমির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অনেককে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করা হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বিশ্বব্যাপী নিন্দা, ধর্মবিরোধ ও ধর্মত্যাগ আইন বাতিল করার একটি প্রস্তাব পাস করে। বিষয়বস্তু ও প্রয়োগ উভয় পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইন জীবনের অধিকার, চিন্তার স্বাধীনতা, বিবেক এবং ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা, মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের আগে সাম্যতা, বৈষম্য নিষিদ্ধকরণ এবং জীবনের অধিকার রক্ষার বাধ্যবাধকতার বিরোধী।
Leave a Reply