বিদেশ ডেস্ক ॥ দক্ষিণ এশিয়ার রক্ষণশীল মুসলিম দেশ পাকিস্তানে প্রচলিত ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননা আইনের তীব্র সমালোচনা করে এ আইন দ্রুত রদ করার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পর্লামেন্ট। সম্প্রতি এ আহ্বান জানায় ইউরোপের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোটের এ পার্লামেন্ট। ইইউ পার্লামেন্ট জানায়, পাকিস্তানে যে উদ্দেশ্যেই ধর্ম অবমাননার এ আইন তৈরি করা হোক না কেন সেটি তার লক্ষ্য হারিয়েছে। ফলে লক্ষ্যহীন কোনো আইন দিয়ে দেশটি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে না। তাই দ্রুত এ আইনটি বাতিলের আহ্বান জানান তারা। এর আগে মানবাধিকার কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্লাসফেমি আইন বাতিল করার চেষ্টা করছেন। তাদের যুক্তি- এই আইন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন বা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থে ব্যবহার হচ্ছে। অ্যাডভোকেসি গ্রুপ সিএসজে জানিয়েছে, পাকিস্তানে ১৯৮৭ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৮৫৫ জনকে ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। দেশটির বৃহত্তম ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী খ্রিস্টান। সংখ্যায় তারা প্রায় ২৮ লাখ। ব্লাসফেমি আইনের সবচেয়ে বেশি মুখোমুখি এরাই। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘ওপেন ডোরস ইউএসএ’ এর ২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড ওয়াচ লিস্ট অনুযায়ী, খ্রিস্টানদের ওপর নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে পাকিস্তান পঞ্চম। বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টানদের উন্নয়নে কাজ করে বেলজিয়ামভিত্তিক সংস্থা এসিএটি। এর একজন বোর্ড সদস্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সম্প্রতি একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে খ্রিস্টান দম্পতি শাফকাত ইমানুয়েল ও শাগুফতা কাউসারের মামলার বিষয়ে তিনি ইমরান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ধর্ম অবমাননার জন্য এই খ্রিস্টান দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বিশ্বব্যাপী ধর্ম অবমাননা, ধর্মবিরোধ ও ধর্মত্যাগ আইন বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে। এতে বলা হয়, বিষয়বস্তু এবং প্রয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইন মানবাধিকার, চিন্তার স্বাধীনতা, ধর্ম বা বিশ্বাস, মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ব্লাসফেমি আইন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির ৬ (১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে।
Leave a Reply