মেয়ে সেজে ফেসবুকে আড়াই বছর প্রেম করে বিয়ে করার কথা বলে প্রেমিক নিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পরেছে কথিত প্রেমিকা সুমন মিয়া। বিভিন্ন সময়ে হাতিয়ে নিয়েছে ৩ লক্ষাধিক টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনার বেতাগী উপজেলার বেতাগী পৌর এলাকায়। ভুয়া প্রেমিকাকে বরগুনা জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঢাকার লালবাগের মো: সুমন মিয়া (৩০) ফেসবুকে জারা খান নামে দিয়ে ফেক আইডি খোলা হয়। আইডির প্রোফাইলে ব্যবহার করা হয় সুন্দরী মেয়ের ছবি। বায়োগ্রাফিতে নিজেকে মডেল হিসাবে উল্লেখ করেন। এই আইডির মাধ্যমে পরিচয় হয় বেতাগী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত. রাধিকা জীবন রায়ের পুত্র টুটুল রায়ের সাথে। কথিত জারা খান কিছুদিন চ্যাটিং করার পর টুটুলকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সুন্দরী জারা খানের ছবি দেখে তার প্রেমের প্রস্তাব রাজি হয়ে যায় টুটুল রায়। জারা খান নিজেকে বিত্তশালী বাবার কন্যা বলে পরিচয় দেয়। শুরু হয় হয় তাদের গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে টুটুলের কাছে টাকা চাইত জারা খান। জারা খানের প্রেমে টুটুল এতটাই আসক্ত ছিল চাওয়ার সাথে সাথে টাকা পাঠিয়ে দিত। এভাবে ৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সুমন মিয়ার এই চক্র। মাঝে মাঝে ভিডিও কলে সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে কথা বলাত যেন টুটুলের কোনো সন্দেহ না থাকে। এভাবে চলে আড়াই বছরের কঠিন প্রেম। এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের ধর্ম। পরে তাদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে টুটুল রায়কে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার শর্তে টুটুল রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণে সম্মত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেয়া এবং বিয়ে করার জন্য টুটুলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে ২৯ আগস্ট (রোববার) বেতাগী আসেন জারা খানের আপন ছোট ভাই পরিচয় দেয়া সুমন। টুটুল তার বন্ধুদের সাথে সুমনকে পরিচয় করিয়ে দেয়। সুমন খানের পোশাক এবং কথাবার্তায় বড়লোক বাবার সন্তান হিসেবে সন্দেহ হলে টুটুলের বন্ধুরা তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
এর মধ্যে পরিবারের লোকজনের অমতে সুমন খানের সাথে ঢাকা যাওয়ার জন্য টুটুল বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এ খবর টুটুলের বন্ধুুদের কাছে পৌঁছালে তারা ঢাকা যাওয়ার বিভিন্ন পথে লোক মোতায়েন করা হয়। উপজেলার সীমান্তবর্তী বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি বাসস্ট্যান্ডে সুমন ও টুটুলকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে টুটুলের বন্ধু ও ছাত্রলীগ নেতা মো: রাফি সিকদারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা নিয়ামতি গিয়ে সুমন ও টুটুলকে নিয়ে আসে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সুমন খান স্বীকার করে জারা খান হিসেবে সে এত দিন ধরে নিজেই টুটুলের সাথে প্রেমের অভিনয় করে আসছিল। সুমন খানের সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে বোরকা, মেয়েদের পোশাক, রূপচর্চার বিভিন্ন উপকরণ, কৃত্রিম চুল ও নেশা জাতীয় বিভিন্ন ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
এসব উপকরণসহ সুমন খানকে বেতাগী থানা পুলিশে দেয়া হয় এবং টুটুল রায়কে অচেতন অবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। টুটুল রায়ের বড় ভাই হরি চন্দ্র রায় বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২২(২) এবং ২৪ (২) ধারায় সুমন খানকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ৯)।
সুমন খান এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, আড়াই বছর টুটুলের সাথে মেয়ে কণ্ঠে কথা বলে বিভিন্ন সময়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছি। এ ধরনের প্রতারণায় সহযোগিতায় করে গ্রুপের মেয়ে সদস্যরাও। আমাদের চক্রের কাজ হলো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন তরুণ ও তরুণীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলা।
সোমবার দুপুরে টুটুল রায় জানিয়েছেন, আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করা হয়েছে। আগামীতে আমার মত আর যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হয় সে জন্য সকলের সচেতন হওয়া দরকার।
বেতাগী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, সুমন খানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বরগুনায় আদালতে তাকে প্রেরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply