নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ১৫ বছর আগে নতুন ব্যবসার খোঁজে ভারতে পাড়ি জমান আমার চাচা মোঃ আব্দুল সরদার। সেখানে গিয়ে খোঁজ পান বরফ ও বিভিন্ন ফলের স্বাদের তরল (ফ্লেবার) সংমিশ্রনে তৈরি গোলা নামে এক ধরনের আইসক্রিমের। বেশ কিছুদিন ভারতে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন গোলা আইসক্রিম তৈরির উপর। এরপর দেশে ফিরে ঢাকার মৌলোভীবাজারে ব্যবসা শুরু করেন। এখনও সেখানে তার দোকান আছে। এছাড়া ভারত থেকে তিনি নিয়মিত ফ্লেবার আমদানি করে। আমার বাবা, চাচা, চাচাতো ভাইসহ আমাদের পরিবারে সবাই গোলা আইসক্রিম বিক্রির সাথে জড়িত। এটা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। কথাগুলো বলছিলেন নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের গোলা আইসক্রিম বিক্রেতা মোঃ আলআমিন সরদার। চাচার হাতে মাত্র ১০ বছর বয়সেই গোলা আইসক্রিম তৈরি করার প্রশিক্ষন নেন তিনি। বর্তমানে তার বয়স ২১। ১১ বছরের ব্যবসা জীবনে ৭ বছর ঢাকায় করেছেন গোলা আইসক্রিমের ব্যবসা। এরপর ২০১৮ সালে বরিশালে এসে আল আমিন ভাইয়ের গোলা আইসক্রিম নামে একটি স্টল দেন তিনি। প্রথমে ভ্যান গাড়িতে স্টল সাজিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে গোলা আইসক্রিম বিক্রি করলেও তার স্থায়ী ঠিকানা বঙ্গবন্ধু উদ্যান। দুই ভাই আর বাবা মাকে নিয়ে গোলা আইসক্রিম বিক্রির টাকায় সংসার চলে আল আমিনের। শুরুর দিকে তার বাবা শাহে আলম সরদার ও তিনি আলাদা আলাদা ব্যবসা করলেও এখন বাবার স্টলেই বসেন আল আমিন। নিজের পুরাতন স্টলে ছোট ভাইকে দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন শিগগিরই। গোলা আইসক্রিমের দাম ও ফ্লেবার সম্পর্কে জানতে চাইতে আল আমিন বলেন, আমার দোকানে ২০ টাকা থকে শুরু করে ১৯০ টাকা অবদি গোলা আইসক্রিম পাওয়া যায়। যত ফ্লেবার দিবেন তত দাম। এছাড়া টক, মিষ্টি, ঝাল ফ্লেবার। যে যেমন চায় তাকে তেমন করেই বানিয়ে দেই। আমার এখানে অরেজ্ঞ,ম্যাঙ্গো ও স্টবেরী ফ্লেবারটা বেশি চলে। লকডাউনে কেমন ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ফুটপাতের ব্যবসায়ী। আমাদের জন্য বিধি নিষেধ সবার আগে কার্যকর হয়। লকডাউনের আগে রোজ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। লকডাউনে আল্লাহ চালাইছে; এখন আবার বিক্রি আগের মতো। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ঘুরতে আসা বরিশাল কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র আবির জানান, আলআমিন ভাইয়ের গোলার স্বাদ আলাদা। এখানে ঘুরতে আসলে আলআমিনের গোলা না খেলেই নয়। করোনার এই সময় আলআমিন ভাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করছে। এছাড়া তার দোকান সব সময় পরিস্কার থাকে। সব চাইতে বড় কথা গোলার বরফ তিনি নিজে বাসা থেকে বানিয়ে আনেন। বাইরের কেনা বরফ নয়। মায়ের সাথে ঘুরতে আসা ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী আফসানা রিমি জানান, মা প্রায়ই সুযোগ পেলে আমাকে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ঘুরতে নিয়ে আসে। আমি এখানে আসলে আল আমিন ভাইয়ের গোলা খাই। এটা খেতে খুব মজা। ব্যবসায় কেমন পুঁজির প্রয়োজন হয় এমন প্রশ্নের জবাবে আল আমিন বলেন, মূলত এ ব্যবসার প্রধান মাল হলো ফ্লেবার। প্রকার ভেদে ২ হাজার থেকে ৮ হাজার পর্যন্ত দামের ফ্লেবার আছে। আবার ৫০০ টাকার ও আছে। ফ্লেবার যত ভালো দিবেন স্বাদ ততো ভালো হবে। এছাড়া বরফ বাইরে থেকে না কিনে আমার মতো নিজে বাসায় তৈরি করলে স্বাদ আরও ভালো হয়। যে মেশিন থেকে বরফ কাটা হয় সেই মেশিন ২০ হাজার থেকে ১২ হাজারের মধ্যে ভারত থেকে আনা যায়। আমার চাচা এগুলোর ব্যবসা করে। কেউ যদি ব্যবসা শুরু করতে চায় আমি তাকে সহায়তা করবো।
Leave a Reply