ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে বেশ ক’টি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা। গত ৬ মাসে ১০ খুন ও ২৬টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বছরের প্রথম দিন শুরু হয়েছিলো খুন দিয়ে, আর জুন মাস শেষ হলো তিনটি খুন ও এক ভারসাম্যহীন নারীকে ধর্ষণের ঘটনা দিয়ে।
গত কয়েক মাসে আলোচিত ঘটনা ছিলো, থানাকান্দি গ্রামের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের লোকজন মোবারকের পা কেটে হাতে নিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে উল্লাস করা, ১২ মে নবীনগর সদরে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্য অস্ত্র ঠেকিয়ে চাঁদা দাবি, চাঁদা না পেয়ে বাসায় গুলি করা, ১৫ মে ফতেহপুর গ্রাম থেকে ৪৭ রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করার ঘটনায় সারা দেশে আলোচনায় ছিলো নবীনগর উপজেলা। এসব ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ বছরের প্রথম দিনে এক হাজার টাকার দেনা পাওনাকে কেন্দ্র করে ১ জানুয়ারি পৌর এলাকার জাহিদুল ইসলাম সানি নামে একজন খুন হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছেলের দায়ের কোপে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আলমগীর হোসেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি সলিমগঞ্জ জান্নাতুল ফেরদৌস মহিলা মাদরাসা থেকে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা, ৫ মার্চ উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে এক সংঘর্ষে হেকিম মিয়া মারা যায়, ১৬ মার্চ সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের নিলখি গ্রামে এক বখাটের হাতে আকলিমা বেগম নামে এক গৃহবধূ খুন। ১২ এপ্রিল কৃষ্ণনগরের থানাকান্দি গ্রামের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রতিপক্ষের লোকজন পা কেটে নিয়ে যায় মোবারক মিয়ার, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ এপ্রিল মারা যান মোবারক। ১৫ মে উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। ২৩ জুন উপজেলার শ্রীরামপুর পশ্চিম পাড়া জমি থেকে গোপালপুর গ্রামের শিরিন আক্তারের লাশ উদ্ধার। ২৩ জুন লাউর ফতেহপুর গ্রামে এক সংঘর্ষের ঘটনায় আহত জয়নাল আবেদীন ২৮ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ২ জুন সাহেবনগর গ্রামের দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হানিফ মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ জুন মারা যান। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে থানাকান্দি, সাহেবনগর ও বাজে বিশারা গ্রামে। ওইসব রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই শতাধিক বাড়িঘড় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, আহত হয়েছে কয়েক শ’ মানুষ।
অপরদিকে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পারিবারিক কলহের জের ধরে বিষপানে ও গলায় ফাঁসসহ বিভিন্ন ঘটনায় অপমুত্য হয়েছে ২৬ জনের। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে পাঁচজন, ফেব্রুয়ারিতে চারজন, মার্চে তিনজন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ছয়জন ও জুন মাসে পাঁচজন।
কয়েকটি ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৮ জানুয়ারি নবীনগর কলেজ পাড়ায় সাত বছরের শিশুকে কেক খাওয়ানোর কথা বলে ধর্ষণ করে এক বখাটে। ৫ মার্চ বড়াইল গ্রামে স্কুল মাঠে পাতা কুঁড়াতে গিয়ে কিশোরী ধর্ষিত, ২৭ জুন থোল্লাকান্দি গনিশাহ মাজারে পাশে একটি ঘরের তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে এক ভারসাম্যহীন নারীকে ধর্ষণ করে দুজন। ৬ এপ্রিল নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে ছয় বছরের এক শিশু নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ এখনো উদ্ধার হয়নি। ১২ জুন নবীনগর উপজেলার বাড়িখলা গ্রামের এক স্কুলছাত্রী অপহরণ হওয়ার তিন দিন পর উদ্ধার। এ ছাড়া শ্যামগ্রামে দুটি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সচেতন মহল বলেন, প্রতিটি খুনের ঘটনার সাথে সামাজিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার জড়িত রয়েছে। এসব খুনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ও গ্রাম্য নেতাদের মাঝে চলে রমরমা বাণিজ্য। অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ফাঁসিয়ে দেয়া হয় খুনের মামলায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একার পক্ষে দাঙ্গা বন্ধ করা কোনো অবস্থাতেই সহজ হবে না। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে এসব ঘটনার নিরসন করতে হবে।
নবীনগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ রনোজিত রায় বলেন, নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে নবীনগরবাসীর সহযোগিতা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও এলাকায় শান্তি রক্ষার জন্য সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনান্য বছরের তুলনায় আমি দায়িত্ব পালন করার সময়ে নবীনগরে দাঙ্গা ও খুনের ঘটনা অনেকটা নিয়নন্ত্রণে ছিলো, যা রেকর্ডে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অস্থিরতা থেকে আত্মহত্যার দিকে মানুষ ছুটে যায়। সে কারণে সামাজিকভাবে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। তবেই আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে।
Leave a Reply