নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সরকারি বরিশাল কলেজের নামের সঙ্গে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত’র নাম যুক্ত করার ব্যাপারে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কাছে মতামত সহ সুপারিশ চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু সরকারি এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে উক্ত শিক্ষা বোর্ডের সরকারি কর্মচারীরা। কলেজটির নাম পরিবর্তন না করার দাবিতে অবস্থান নিয়ে বোর্ড কার্যালয়ের মূল ভবনে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী কল্যাণ সংঘের নেতারা।আর এমন ঘটনাকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতনরা।
মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বেলা ১২ টায় সরেজমিনে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় শিক্ষা বোর্ড কার্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্রের দেখা মেলে। জানা গেছে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ব্যানার টাঙানোর আগে সমাবেশও করেছে সরকারি কর্মচারীদের এই সংগঠনটি।এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সংগঠনের সভাপতি আবু জাফর সিকদারের খোঁজ করলে তাকে সেসময় অফিসে পাওয়া যায় নি।
পরবর্তীতে মুঠোফোনে এই কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বরিশালের আপামর জনতার দাবি সরকারি বরিশাল কলেজের নাম যেন অপরিবর্তিত থাকে। যেহেতু আমরাও বরিশালে বাস করি তাই এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সমাবেশ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সমাবেশের ব্যানারটি বোর্ডের মূল ভবনের দেয়ালে টাঙানো হয়’। তবে তিনি জানান, ব্যানার টাঙানো ঠিক হয় নি। দ্রুতই এটা অপসারণ করা হবে।
তবে অফিস চলাকালীন সময়ে তিনি অনুপস্থিত কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান,নিজ এলাকার আওয়ামীলীগ অফিসে তাকে একটা সালিসি (বিচার) করতে হচ্ছে । তাই তিনি সেখানে এসেছেন এবং সালিসি চলার মাঝখানেই এই প্রতিবেদকের ফোন ধরেছেন। আর সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারি কর্মচারীদের এভাবে সমাবেশ করা কিংবা সরকারি দপ্তরে ব্যানার টাঙানো আইনত দ-নীয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব সিরাজউদ্দীন আহমেদ।
তিনি জানান, তাদের এমন সমাবেশ এবং ব্যানার টাঙানো সরকারি কর্মচারী বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমন কর্মকা-ের জন্য আইনি ও নৈতিকভাবে এসব কর্মচারী সরকারি চাকরি করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন নিজ কার্যালয়ে এমন ব্যানার টাঙানোর দায় বোর্ডের চেয়ারম্যানও এড়াতে পারেন না। এ ব্যাপারে আজ দুপুরে মুঠোফোনে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইউনুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন শোনার পর বলেন, ‘আমি এখন খুবই জরুরী একটি কাজের মধ্যে আছি। আপনি দশ মিনিট পরে ফোন দিন’। তবে নির্ধারিত সময় শেষে তাকে বারবার ফোন দেয়া হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনে দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারি বরিশাল কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় সংস্কৃতিজনদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশাল জেলা প্রশাসন কলেজটির নাম পরিবর্তনের জন্য উপর মহলে চিঠি দেয়। পরবর্তীতে গত ২৯ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কাছে কলেজটির বর্তমান নামের সঙ্গে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত’র নাম যুক্ত করার ব্যাপারে মতামত সহ সুপারিশ চায়।স্থানীয় গণমাধ্যমে এই খবর প্রচারিত হলে কলেজটির নাম পরিবর্তনের পক্ষে বিপক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এরই মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের সরকারি কর্মচারীদের এমন কার্যক্রম নজরে এলো।
Leave a Reply