নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা। আর তাই ঈদ আসলেই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে গণপরিবহনে শুরু হয় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার যুদ্ধ। বিশেষ করে প্রতি ঈদ বা কোরবানিতে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। যার বেশিভাগই এসে থাকে নৌ পথে। তাই ঈদ আগমের এক মাস আগেই শুরু হয় ঈদ প্রস্তুতি। বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের চলাচলকারী বাংলার টাইটানিক খ্যাত বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে রং-তুলির আঁচড়ে নতুনত্ব সৃষ্টির পাশাপাশি ঘষা-মাজার কাজই জানান দেয় ঈদের আগমনী বার্তা। এমনকি ঈদ আসলেই নতুন নতুন বিলাসবহুল লঞ্চ নৌ-বহরে যুক্ত করার উদ্যোগও দেখা যায় ইতিপূর্বে। তবে এবারের আসন্ন ঈদ উল আযহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। লঞ্চগুলোতে নেই ঈদ পূর্বক প্রস্তুতি। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাব ইতিপূর্বের সকল ঈদ প্রস্তুতি ভন্ডুল করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই প্রথম কোন ঈদে বিশেষ সার্ভিস অর্থাৎ ডাবল ট্রিপ ছাড়াই ঈদে যাত্রী পরিবহন করবে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের লঞ্চগুলো। তাও আবার সব লঞ্চ ঈদ সার্ভিসে যুক্ত হবে কিনা সে নিয়েও সন্দিহান মালিকরা।
এমনটিই জানিয়েছেন যাত্রীবাহী নৌ পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু। এদিকে লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, ‘করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। এর ফলে দুই মাসের অধিক সময় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় মালিক এবং শ্রমিকদের। প্রতি রোজার ঈদে যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে সারা বছরের লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখার আশা করেন তারা। কিন্তু করোনার প্রভাবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় লাভের পরিবর্তে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে মালিকদের।
মালিকরা বলেন, ‘রোজার ঈদে যে ক্ষতি হয়েছে তা কোরবানির ঈদে কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে ঈদের দশ দিন আগেও চলাচলরত লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি সেই প্রস্তুতিকে হতাশায় ঠেলে দিয়েছে। তাই কোরবানির ঈদেও লোকসান ধরে নিয়েছেন অনেক লঞ্চ মালিক।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘কোরবানির ঈদে লোকসান ঠেকাতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। ২০১৩ সাল থেকে এ বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছেন মালিকরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে নৌ পথে লঞ্চ চলাচলে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মালিক সমিতির ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল মতবিনিময় করেন। সেই মতবিনিময় সভাতেও প্রাধান্য পায় লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব। যা নাকোচ করে দেন প্রতিমন্ত্রী। এ বিষয়ে ঈদের পরে সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে আপাতত বর্তমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ সার্ভিস দেওয়ার নির্দেশনাও দেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় মালিক সমিতির প্রতিনিধি হয়ে অংশগ্রহণ করা যাত্রীবাহী নৌপরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবনার বিষয়টি নিয়ে ঈদের পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী লঞ্চে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া ঈদ সার্ভিস কিভাবে হবে, নৌ পথের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে।
এবারের ঈদ সার্ভিসের প্রসঙ্গ তুলে মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, ‘এবার বিশেষ সার্ভিসের কথা পড়ে। কেননা মালিকরা নর্মাল সার্ভিস নিয়েই চিন্তিত। করোনার কারণে লঞ্চে যাত্রী নেই বললেই চলে। এ কারণে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে লোকসানের ভয়ে কয়েকটি কোম্পানি তাদের ৭-৮টি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে। হতে পারে ঈদের আগে ওইসব লঞ্চ পুনরায় যাত্রী পরিবহন শুরু করতে পারে। তবে আমরা সেটা এখনো নিশ্চিত নই। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক লোক আগেই নিজ নিজ বাড়িতে চলে এসেছে। আমাদের মূল টার্গেট থাকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। কিন্তু করোনার প্রভাবে অনেক শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বাড়িতে বসে আছেন। আবার সরকারি সকল কর্মকর্তাকে ঈদের সময় কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তাছাড়া সস্প্রতি ঈদ সার্ভিসের টিকেট বিক্রি শুরু হলেও তাতে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে এবার কোরবানিতে বাস-লঞ্চ কোনটাতেই যাত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এবার কোরবানির ঈদে নৌ রুটে বিশেষ সার্ভিস বা ডাবল ট্রিপ হবে না। তবে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে সে ক্ষেত্রে বিশেষ সার্ভিসের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির এই নেতা।
Leave a Reply