ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ইতালিতে আবার বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ইউরোপে। জার্মানি বিদেশ ফেরত সবাইকে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইউরোপ দ্বিতীয় দফা করোনা সংক্রমণের দ্বারপ্রান্তে। ফ্রান্সে নতুন সংক্রমিত হয়েছেন ১০৬২ জন। আগের সপ্তাহের চেয়ে শতকরা ৮৯ ভাগ বেশি নতুন সংক্রমিত হয়েছেন বেলজিয়ামে। ইতালিতে শুক্রবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তিন শতাধিক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল।
এমন অবস্থায় জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিলেক কালাইচি বলেছেন, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে যারা দেশে ফিরবেন তাদের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা উচিত। আবার ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন দেশ থেকে যারা দেশে ফিরবেন তাদের জন্যও এই সুযোগ থাকবে। বিনামূল্যে সবাই এই পরীক্ষা করাতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এ পরীক্ষা বাধ্যতামুলক করা হচ্ছে না। পরীক্ষার ব্যয় বহন করবে রাজ্য। তিনি বলেন, জার্মানির ১৬টি রােেজ্যর স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা এর সঙ্গে একমত হয়েছেন।
ফ্রান্সে মঙ্গলবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫৮৪ জন। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করে তা বেড়ে দাঁড়ায় কমপক্ষে ১০৬২। গ্রীষ্মের ছুটিতে লোকজন অবকাশ যাপনে বেরিয়ে পড়ার কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত তিন সপ্তাহে ফ্রান্সের মূল ভূখন্ডে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা ৬৬ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহে এ পরিমাণ ছিল শতকরা ২৬ ভাগ।
আগের সপ্তাহের তুলেনায় বেলজিয়ামে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৮৯ ভাগ। এর মধ্যে পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর মারা গেছে তিন বছর বয়সী একটি শিশুকন্যা। ফলে সংক্রমণ ধীরগতির করতে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার থেকে বিধিনিষেধ কড়াকড়ি করেছে। এর মধ্যে জনবহুল এলাকায় মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইতালিতে কমপক্ষে ৩০০ নতুন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। মধ্য জুনের পর এই প্রথম সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। বেশির ভাগ আক্রান্তই দেশটির উত্তরাঞ্চলের। ফেব্রুয়ারিতে এ অঞ্চল থেকেই ইউরোপে করোনা ভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়েছিল। তবে সে তুলনায় দেশটির দক্ষিণাঞ্চল অনেকটা ভাল আছে।
সম্প্রতি যেসব মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন বলে শনাক্ত করা হয়েছে তারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তার মধ্যে বেশির ভাগই এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ বা বলকান অঞ্চলের বিদেশি শ্রমিক। এ ছাড়া সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের মাধ্যমেও করোনা ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। ফ্রান্সে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ এ সপ্তাহ থেকে সব ইনডোর পাবলিক স্পেসেও মুখে মাস্ক পরাকে বাধ্যতামুলক করেছে। প্রতিদিনের হিসেবে ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৩০,১৮২। স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকজন সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়ে তেমন তোয়াক্কা করছে না। এ অভ্যাসের কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সমুদ্র সৈকতে অবকাশ যাপন কেন্দ্র লা বেউলে-এস্কোব্লাকের মেয়র সতর্ক করেছেন এই বলে যে, সেখানে অবকাশ যাপনে যাওয়া মানুষের যেন বাণ ডেকেছে। তাদের সংখ্যা হাজার হাজার। তাদেরকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার আহ্বান জানান তিনি। ইতালিতেও অবকাশ যাপনকারীদের কারণে ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে। সেখানকার আড্রিয়াটিক সাগরের পাড়ে অবকাশ যাপন কেন্দ্র রিচ্চিওনেতে মানুষের ঢল নেমেছে। যুবতীরা ডিসকোতে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। গত সপ্তাহে ক্যাপ্রির মেয়র রাস্তায় হাঁটার সময় সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক বলে ঘোষণা দেন।
Leave a Reply