পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥ পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় সেউটিবাড়ীয়া গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মাসুদ গাজী (২২) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ইন্দুরকানি থানা পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পর গত শুক্রবার ২৪ জুলাই ইন্দুরকানি থানার অফিসার ইন চার্জ হাবিবুর রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থার বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মোঃ নুরুল্লাহ আল আমিন। এরপর পরই বিষয়টি অবহিত করে থানা পুলিশের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে ওসিকে ফোন করেন দখিনের খবররের সম্পাদক। একই বিবষয়ে একাধীদক ফোন পেয়ে কিছুটা নড়েচড়ে বসেন ওসি হাবিবুর রহমান। কিন্তু ওসি হাবিবুর রহমান প্রথমে মসজিদ নির্মান নিয়ে দ্বন্দ্বে বিষয়টি সাজানো হয়েছে বলে মন্তব্য করলেও পরবর্তীতে সরেজমিনে ওসি তদন্ত ঘটনার সত্যতা পেয়ে ধর্ষন চেষ্টাকারী মাসুদ গাজীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
স্কুল ছাত্রীর মা হনুফা বেগম জানায়, ২১ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে তিনি পাশের বাড়ীতে যান। এসময় তার মেয়ে স্কুল ছাত্রী ঘুমে ছিলো। বাড়ীতে অন্য কেউ না থাকার সুযোগে লম্পট মাসুদ গাজী ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে জোড় করে ধর্ষন করে। এসময় মেয়ের ডাকচিৎকার শুনে মা দৌড়ে বাড়ীতে আসলে ধর্ষক তাকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। এসময় ধর্ষকের টুপি রেখে দেয় স্কুল ছাত্রীর মা হনুফা বেগম। তিনি আরো জানান, বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় এজন্য ছেলের বাবা মা আমার বাড়ীতে পাহাড়া বসায়। যে কারনে তাৎক্ষনিকভাবে আমি কাউকে জানাতে পারি নাই। এভাবে তিন দিন অবরুদ্ধ থাকার পর কোন ভাবে মানবাধিকার সংগঠনের সভাপতি নুরুল্লাহ আল আমিনকে বিষয়টি জানাই। পরবর্তীতে সংবাদকর্মীরা টের পেয়ে গেলে ইন্দুরকানি থানা পুলিশ বিষয়টি একেবারে ধামাপা দিতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মাসুদ গাজীকে আটক করে ইন্দুরকানি থানার ওসি তদন্ত। শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ স্কুলছাত্রী ও তার মা কে নিয়ে থানায় নিয়ে আসে। পরে সারা রাত থানা হেফাজতে রাখে। যদিও এর কারন ব্যাখ্যা করেনি থানা পুলিশ।
এদিকে শনিবার মাসুদ গাজীকে আসামী করে মেয়ের বাবা মোঃ লোকমান গাজী বাদী হয়ে ইন্দুরকানি থানায় মামলা করার পরপরই আসামী মাসুম গাজীকে কোর্টে চালান দেয়া হয়। একই দিন মেয়ের জবানবন্দী গ্রহনের পর আদালতের বিচারক আসামীকে জেলহাজতে প্রেরন করেন। পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ওই স্কুলছাত্রীকে বাসায় একা পেয়ে একই এলাকার আলতাফ গাজীর ছেলে মাসুদ গাজী তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে। এ সময় স্কুলছাত্রীর ডাকচিৎকার শুনে তার মা বাড়িতে আসলে তার মাকে আঘাত করে মাসুদ গাজী পালিয়ে যান। পরে বিষয়টি মাসুদ গাজীর অভিভাবককে জানানো হলে তারা উল্টো ভুক্তভোগীর মা-বাবাকে হুমকি দেন। সেই সাথে মামলা যাতে না করতে পারেন, সেজন্য ভুক্তভোগীদের বাড়িতে বহিরাগত লোক এনে পাহারা দেন। পরে শুক্রবার সকালে কৌশলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থার বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মোঃ নুরুল্লাহ আল আমিনকে বিষয়টি অবহিত করেন স্কুলছাত্রীর মা হনুফা বেগম। এরপর বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীরা টের পেয়ে ইন্দুরকানি থানায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা মর্মে জানতে চান। এরপরই নড়েচরে বসে থানা পুলিশ। প্রথমে বিষয়টি ইন্দুরকানি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মসজিদ নির্মান নিয়ে দ্বন্দ্বে বিষয়টি সাজানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানালেও সরেজমিনে ওসি তদন্ত ঘটনার সত্যতা পেয়ে ধর্ষনের চেষ্টাকারী মাসুক গাজীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসলে আটকে যায় ওসি হাবিবুর রহমানের আসামীকে বাঁচানোর ষড়যন্ত্র। দৈনিক দখিনের খবর’র সম্পাদক কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর ও মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থার বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মোঃ নুরুল্লাহ আল আমিন এর চাপে পরে স্কুলছাত্রীর বাবা মোঃ লোকমান গাজী বাদী হয়ে মাসুদ গাজীর বিরুদ্ধে মামলা নিতে বাধ্য হয় ওসি হাবিবুর রহমান।
শুক্রবার ইন্দুরকানি থানার ওসি হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে সেখানে ধর্ষনের কোনো ঘটনা ঘটে নাই। ঘটনা হলো ওই বাড়ীতে একটি মসজিদ নির্মানকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এরকম ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এরপর তিনি বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে একজন দারোগা পাঠিয়েছিলাম। আসল ঘটনা হচ্ছে মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ। এরপর ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য ওসি তদন্তকে পাঠানো হয়েছিলো। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ধর্ষনের চেষ্টাকারী মাসুদ গাজীকে আটক করে নিয়ে আসে। এরপরই বদলে যায় প্রেক্ষাপট। স্কুল ছাত্রীর মা হনুফা বেগম জানায়, মামলা দায়েরের পর একের পর এক প্রাননাশের হুমকী অব্যাহত রেখেছে লম্পট মাসুদ গাজীর পরিবার। সরাসরি হুমকী দিচ্ছে মামলা প্রত্যাহার না করলে বাদী লোকমান গাজীর পরিবার নির্মূল করা হবে বলে। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থার বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মোঃ নুরুল্লাহ আল আমিন জানান, আসামীর পরিবারের পক্ষ থেকে হুমকী অব্যাহত থাকলে কিংবা এব্যাপারে থানা পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে আমরা মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
Leave a Reply