নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানিকৃত পশুর চামড়া সংগ্রহ করার পর বিভিন্ন উপায়ে সেগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহকৃত চামড়া পাঠান ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। কিন্তু এসব মালিকদের কাছে বিগত দিনের বিশাল অংকের টাকা পাওনা আছে তাদের। এছাড়া সরকার এবছর কাঁচা চামড়ার মূল্য গত বছরের চেয়ে কম নির্ধারু করেছে। যে কারণে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়েছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। এতে করে জেলায় কোরবানি হতে যাওয়া সম্ভাব্য হাজার হাজার পশুর চামড়া নষ্ট হবার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত বছর (২০১৯) কোরবানি উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন হাট থেকে মোট ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৩০ টি পশু বিক্রি হয়েছিল। এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে এই সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, তাদের ৫৪ জন সদস্যের মধ্যে কেউই এবার চামড়া সংগ্রহে অর্থ লগ্নি করতে ইচ্ছুক নন। কারু সবারই কম বেশি টাকা আটকে আছে ট্যানারি কারখানার মালিকদের কাছে। যা সরকারি হস্তক্ষেপেও আদায় করা যায় নি। এর উপর চামড়ার দাম কমে যাওয়ার দরুণ নতুন করে ট্যানারি শিল্পপতিদের পাওনাদারের তালিকায় নিজেদের নাম লিপিবদ্ধ করতে আগ্রহী নন কেউ।
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহীন নিজে এবার চামড়া কিনবেন না। তিনি জানান, ২০১৬ সাল থেকে ট্যানারি মালিকেরা পাওনা টাকা নিয়ে টালবাহানা করে আসছেন। প্রতিবছর কোরবানির আগে কিছু টাকা দেন এবং চামড়া পাঠানোর কথা বলেন। চামড়া পাঠানো হয়ে গেলে কারো কোন খোঁজ থাকে না। তাই এবার তিনি নিজেও চামড়া কেনা কিংবা ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া পাঠানো থেকে বিরত থাকবেন।
বরিশালের বেশিরভাগ চামড়া ব্যবসায়ী এবার চামড়া সংগ্রহ করবেন না দাবি করে তিনি বলেন,‘গতবছর সরকার তাদেরকে চাপ দিয়ে আমাদের বিগত দিনের টাকা ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে এনে দিতে পারে নি। সবার কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে এবার চামড়ার দামও কম। তাই করোনা পরিস্থিতিতে নতুন করে আর লোকসানের ঝুঁকি বাড়াবে না বিধায় আমাদের সমিতির ৫৪ জন পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ী এবার চামড়া না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’। এর আগে, গত বুধবার রপ্তানির সুযোগ রেখে গতবছরের চেয়ে প্রায় ২৯ শতাংশ দাম কমিয়ে এবার কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারু করেছে সরকার। এ বছর ঢাকায় গরুর চামড়া প্রতি বর্গ ফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা দাম নির্ধারণ হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ দাম কমিয়ে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর চামড়ার এই দাম নির্ধারণ কর দেন। গত বছর (২০১৯) প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া ছাগলের চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা। বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, করোনা সঙ্কটের কারণে এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ হয়েছে। তবে নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া বিক্রি না হলে রপ্তানি করা হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply