স্টাফ রিপোর্টার ॥ জমিজমা ও উপার্জিত অর্থ আত্মসাত করতে পরিবারের সদস্যরা এক প্রবাসীকে পাগল আখ্যায়িত করে গত দুইবছর পায়ে শিকল বেঁধে গোয়াল ঘরে রেখেছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা জেনেও রহস্যজনক কারণে ওই প্রবাসীকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেনি।
ফলে অর্ধাহারে, অনাহারে এখন মৃত্যুর শষ্যায় রয়েছেন শিকল বন্দি মোহাম্মদ উল্লাহ। ঘটনাটি জেলার হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের। মোহাম্মদ উল্লাহ ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অহিদুল আলম তালুকদারের পুত্র।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রোষানলের শিকার মোহাম্মদ উল্লাহ তালুকদার। তার (মোহাম্মদ উল্লাহ) ভাগের জমিজমা ও উপার্জিত অর্থ আত্মসাত করার জন্য গত দুইবছর পূর্বে পাগল আখ্যায়িত করে শিকল বন্দি করে গোয়ালঘরে রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদ উল্লাহর ছোট বোন লায়লা আক্তারের অভিযোগ তার ভাই পাগলামি করে তাই বেঁধে রাখা হয়েছে। মোহাম্মদ উল্লাহর অপর ভাই আহাম্মদ উল্লাহ মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের জানান, ভাই পাগল তাই বেঁধে রাখা হয়েছে। পাগল না হলে আপন ভাইকে এভাবে বেঁধে রাখা হয়।
মোহাম্মদ উল্লাহর মা রেবেকা বেগমের সাথে কথা বলতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার (রেবেকা) সন্ধান দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। অহিদ মাষ্টারেরও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। অজ্ঞাতস্থান থেকে অহিদ মাষ্টার ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আগে আমার পুত্র মোহাম্মদ উল্লাহকে বাঁচান। এভাবে ছেলেটিকে বন্দি করে রাখা হলে সে মারা যাবে। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে স্থানীয় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে লাভ নেই। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম্য মোড়লরা বিষয়টি জানা সত্বেও অদ্যবর্ধি পাগল আখ্যায়িত করে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা মোহাম্মদ উল্লাহকে কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহিম মোল্লাও এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি শুধু বলেন, বিষয়টি খুবই জাটিল। হিজলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালী জানান, মোহাম্মদ উল্লাহ পাগল নন। তাকে পাগল সাজানো হয়েছে। আলম মাষ্টারের সম্পত্তি এককভাবে ভোগ করার জন্য এ নাটক সাজানো হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা শিকল বন্দি মোহাম্মদ উল্লাহকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
মোহাম্মদ উল্লাহর ফুপু সুরমা বেগম জানান, শিকল বন্ধি ছেলেটির কথা বলায় ইতিপূর্বে তাকে কয়েকবার মারধর করা হয়েছে। তাই এখন আর তিনি ওই বাড়ির কোন খোঁজ খবর নেন না। তিনি মোহাম্মদ উল্লাহকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে বাঁচানোর জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply