বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আজ দেশপ্রেমের যে অভাব, প্রতিবাদ করার যে শক্তি তা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এর চেয়ে চরম দুর্ভাগ্য একটি স্বাধীন দেশের জন্য হতে পারে না। আজকে সৎ রাজনীতিবিদের অভাব। মিথ্যাচার এখন সত্যাচারে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার এক ভার্চুয়াল স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক নৌবাহিনী প্রধান এবং সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভা হয়।
সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, মিথ্যাচারের যে সংস্কৃতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই মিথ্যাচারের রাজনীতি থেকে দেশের এই অবক্ষয়। দেশে আইনের শাসন নেই। স্বাধীনতা নেই। সুশাসন বলতে যা বোঝায় তা বিন্দু মাত্র নেই। যে পার্লামেন্ট আছে সেখানে সরকারকে জবাবদিহি করতে হয় না। ভোটের মাধ্যমে এই পার্লামেন্ট গঠিত হয়নি। এই অবস্থায় রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।
সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ১৯৮৪ সালে ৬ আগস্ট শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বাবা।
মাহবুব আলী প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, তিনি ছিলেন আদর্শবান মানুষ, অত্যন্ত উঁচু মাপের মানুষ। তিনি সংবেদনশীল, সজ্জন ও সহমর্মী মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে যে তিনটি গুন ছিল। তা হচ্ছে দেশপ্রেম, তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। সাহস ছিল। তিনি সৎ ছিলেন। আর সৎ মানুষরা সাহসী হয়। যার জন্য তিনি তালপট্টি রক্ষা করতে পেরেছিলেন। তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল। তার পিতা ১৯০১ সালে ব্যারিস্টার ছিলেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী মানুষ ছিলেন।
মাহবুব আলী খান ও তিনি জিয়াউর রহমানের একই মন্ত্রিসভায় ছিলেন জানিয়ে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, শহীদ জিয়া গঙ্গার পানির হিস্যার ব্যাপারে সাহস করে একদিকে যেমন কর্তৃত্ব রক্ষা করা, অন্যদিকে জাতিসংঘে নিয়ে যাওয়া অচিন্তনীয় ব্যাপার ছিল। ভারত এতো বড় রাষ্ট্র, তারা আমাদের দাবি মানল না, তখন তিনি জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে নিয়ে গেলেন। তখন তারা বাধ্য হল আলোচনায় অংশ নিতে। ফলে ১৯৭৭ সালে গঙ্গা চুক্তি হয়।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে মিথ্যা ভিত্তিহীন বানোয়াট মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। এর চাইতে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে? সমাজে যে পারস্পরিক সম্মানবোধ, সহনশীলতা বলতে এখন আর কিছু নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গত দুই বছর কারাগারে ছিলেন। ঈদের দিন তার সাথে সাক্ষাত হয়েছে। তিনি মানসিকভাবে ভালো আছেন। তবে শারীরিকভাবে ভালো নেই। করোনার কারণে তার যে সুচিকিৎসার প্রয়োজন তা করতে পারছেন না।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, দেশের মানুষ আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান ও বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। কখন আমরা গণতন্ত্রের চর্চা ফিরিয়ে আনবো। দেশে সুশাসন, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনবো। দেশে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা কীভাবে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। এটা হচ্ছে আমাদের সামনে বড় সঙ্কট। আমাদের এখন পেছনের দিকে তাকানোর সময় নেই। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের কাজ করতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও। সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা একেএম ওয়াহিদুজ্জামান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রমুখ।
Leave a Reply