সুপ্রচীন কাল থেকে সামরিক শক্তি একটি সার্বভৌম দেশের শক্তির প্রতীক। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি স্বাধীন দেশ নিজেদের সামরিক শক্তিতে বলীয়ান করতে গঠন করে নিজস্ব সেনাবাহিনীÑ যার কাজ হলো অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শত্রু থেকে যুদ্ধ করে নিজ মাতৃভূমি রক্ষা করা। সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকা শীর্ষস্থানীয় দেশের সেনাবাহিনীর অধিকাংশ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরীয় যুদ্ধ, এমনকি গৃহযুদ্ধে জড়িত ছিল। উপরন্তু এই সামরিক বাহিনী তাদের নিজ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্যের জন্য যুদ্ধে সরাসরি জড়িত ছিল, কোনোটা আবার পালন করেছে দখলদার কিংবা হানাদারদের ভূমিকা, কালিমা লেপন করেছে মানবতার ইতিহাসের পাতায়। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে দেখে নেওয়া যাক সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকা এবং পিছিয়ে থাকা দেশের তালিকা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শামস্ বিশ্বাস
কম সামরিক শক্তির ১০টি দেশ
১. ভুটান
২. লাইবেরিয়া
৩. সোমালিয়া
৪. সুরিনাম
৫. সিয়েরা লিওন
৬. বসনিয়া
৭. পানামা
৮. লাওস
৯. গেবন
১০. সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক
২০২০ : মিলিটারি স্ট্রেন্থ র্যাংকিং
সামরিক বিশ্লেষণকারী ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রতিবছর ওপেন সোর্সে পাওয়া সামরিক অস্ত্রের তথ্যের সহায়তায় এ তালিকা প্রস্তুত করে। এতে কোনো ক্ল্যাসিফায়েড তথ্য ব্যবহার করা হয় না। তালিকা বানানোর সময় ৫৫টি বিষয়কে মাথায় রাখে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল থেকে এই তালিকা বানাচ্ছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। মোট ১৩৮টি দেশের তুল্যমূল্য বিচারের পর চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে সংস্থা। মূলত সেনাবাহিনীর সংখ্যাকেই বিচার করা হলেও সামরিক অস্ত্রভা-ারের বৈচিত্র্যকেও বিবেচনা করা হয়েছে। দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরিস্থিতির পাশাপাশি বিবেচনা করা হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রে সংখ্যাও। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে কৌশলগত যোগাযোগের কারণে ন্যাটো (উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট) গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোকে কিছু অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে পয়েন্টে। ‘২০২০ : মিলিটারি স্ট্রেন্থ র্যাংকিং’য়ে সামরিক শক্তিতে বিশ্বের ১৩৮টি দেশের মধ্যে শূন্য দশমিক ৭০৬৬ শক্তিসূচক নিয়ে ৪৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ তালিকায় শেষে, অর্থাৎ ১৩৮ নম্বরে রয়েছে ভুটান আর শীর্ষস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। চীন ও ভারত রয়েছে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে। পাকিস্তান অনেকটা পিছিয়ে ১৫ নম্বরে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র মিসর রয়েছে শীর্ষ ১০-এ। তুরস্ক রয়েছে ১১ নম্বরে। ইরান ১৪, ইন্দোনেশিয়া ১৬ এবং ১৭তে সৌদি আরব। ইসরায়েল গত বছরের মতো এবার রয়েছে তালিকায় ১৮তে এবং মিয়ানমার ৩৫ নম্বরে।
সামরিক বাজেটে শীর্ষ ১০টি দেশ
১. মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্র ৭৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার
২. চীন ২৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার
৩. সৌদি আরব ৬ হাজার ৭৬০ কোটি মার্কিন ডলার
৪. ভারত ৬ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার
৫. যুক্তরাজ্য ৫ হাজার ৫১০ কোটি মার্কিন ডলার
৬. জার্মানি ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার
৭. জাপান ৪ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার
৮. রাশিয়া ৪ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার
৯. দক্ষিণ কোরিয়া ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার
১০. ফ্রান্স ৪ হাজার ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার
সামরিক জনশক্তিতে শীর্ষ ১০ দেশ
১. চীন ২১ লাখ ৮৩ হাজার জন
২. ভারত ১৪ লাখ ৪৪ হাজার জন
৩. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৪ লাখ জন
৪. উত্তর করিয়া ১২ লাখ ৮০ হাজার জন
৫. রাশিয়া ১০ লাখ ১৩ হাজার ৬২৮ জন
৬. পাকিস্তান ৬ লাখ ৫৪ হাজার জন
৭. দক্ষিণ কোরিয়া ৫ লাখ ৮০ হাজার জন
৮. ইরান ৫ লাখ ২৩ হাজার জন
৯. ভিয়েতনাম ৪ লাখ ৮২ হাজার জন
১০. সৌদি আরব ৪ লাখ ৭৮ হাজার জন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের শূন্য দশমিক শূন্য ৬০৬ শক্তিসূচক নিয়ে, সামরিক শক্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন মুলুকে রয়েছে ১৪ লাখের বেশি যুদ্ধে প্রস্তুত সেনা। এ ছাড়া রয়েছে ৬ হাজার ২৮৯টি ট্যাংক, ৩৯ হাজার ২৫৩ সাঁজোয়া গাড়ি এবং ২০টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। স্থলবাহিনীর পাশাপাশি বিমানবাহিনীতেও বিশ্বের শীর্ষে আঙ্কেল স্যাম। মার্কিনদের কাছে রয়েছে ২ হাজার ৮৫টি জঙ্গি বিমান, ৭১৫টি সাঁজোয়া বিমান, ৯৪৫টি পরিবহন বিমান, ২ হাজার ৬৪৩টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৭৪২টি স্পেশাল মিশন এয়ারক্রাফট, ৫ হাজার ৭৬৬টি হেলিকপ্টার এবং ৯৬৭টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার। নৌবাহিনীতেও পরাক্রমী মার্কিনরা। মার্কিন নৌবাহিনীর কাছে রয়েছে ২০টি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ৯১ ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ এবং ৬৬টি সাবমেরিন। ২০২০ সালে প্রতিরক্ষা খাতে মার্কিন বাজেট বরাদ্দ ৭৫ হাজার কোটি ডলার।
রাশিয়া
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইউক্রেন ও সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করা রাশিয়া রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের শক্তিসূচকে রাশিয়ার পয়েন্ট শূন্য দশমিক শূন্য ৬৮১ নিয়ে ১০ লাখের বেশি সক্রিয় সেনা প্রস্তুত রয়েছে মস্কোর কাছে। এ ছাড়া আমেরিকার থেকে দ্বিগুণ ট্যাংক রয়েছে রাশিয়ার (১২ হাজার ৯৫০)। কমপক্ষে ২৭ হাজার ৩৮টি সাঁজোয়া গাড়ি রয়েছে রুশ অস্ত্রভা-ারে। আকাশেও কম শক্তিশালী নয় ভøাদিমির পুতিনের দেশ। তাদের কাছে রয়েছে ৮৭৩টি জঙ্গি বিমান, ৭৪২টি সাঁজোয়া বিমান, ৪২৪টি পরিবহন বিমান, ৪৯৭টি প্রশিক্ষণ বিমান, ১২৭টি স্পেশাল মিশন এয়ারক্রাফট, ১ হাজার ৫২২টি হেলিকপ্টার ও ৫৩১টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার। নৌসেনার কাছে রয়েছে একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ৬২টি সাবমেরিন, ১৬টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, ১০টি ফ্রিগেট, ৭৯টি কারভেটিস ও ৪৮টি যুদ্ধজাহাজ। চলতি বছরে প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে রাশিয়া।
চীন
‘২০২০ : মিলিটারি স্ট্রেন্থ র্যাংকিং’য়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৬৯১ শক্তিসূচক নিয়ে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ চীন। সামরিক শক্তিতে শীর্ষ তিনে থাকা বেইজিংয়ের কাছে রয়েছে ২১ লাখের বেশি সেনা। রয়েছে ৩৩ হাজার সাঁজোয়া গাড়ি, ৩ হাজার ৫০০ ট্যাংক। চীনা বিমানবাহিনীর রয়েছে ১ হাজার ২৩২টি জঙ্গি বিমান, ৩৭১টি সাঁজোয়া বিমান, ২২৪টি পরিবহন বিমান, ৩১৪টি প্রশিক্ষণ বিমান, ১১১টি স্পেশাল মিশন এয়ারক্রাফট, ৯১১টি হেলিকপ্টার এবং ২৮১টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার। চীনের নৌবাহিনীর কাছে রয়েছে দুটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ৭৪টি সাবমেরিন, ৩৬টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ ও ৫২টি ফ্রিগেট। ২০২০ সালে প্রতিরক্ষা খাতে ২৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে চীন।
ভারত
সামরিক শক্তিতে শীর্ষ চারে রয়েছে ভারত। যে কোনো সময়ে যুদ্ধে প্রস্তুত সক্রিয় সেনার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় বাহিনীর কাছে রয়েছে ৪ হাজার ২৯২ ট্যাংক, ৪ হাজার ৬০ সাঁজোয়া গাড়ি। বিমানবাহিনীর রয়েছে ৫৩৮টি জঙ্গি বিমান, ১৭২টি সাঁজোয়া বিমান, ২৫০টি পরিবহন বিমান, ৩৫৯টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৭৭টি স্পেশাল মিশন এয়ারক্রাফট, ৭২২টি হেলিকপ্টার ও ২৩টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার। ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে রয়েছে একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ১০টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, ১৩টি ফ্রিগেট, ১৩টি কারভেটিস ও ১৬টি সাবমেরিন। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার কারণে গোটা বছরই সক্রিয় থাকে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৬ হাজার ১০০ কেটি মার্কিন ডলার।
জাপান
‘২০২০ : মিলিটারি স্ট্রেন্থ র্যাংকিং’য়ে শূন্য দশমিক ১৫০১ শক্তিসূচক নিয়ে শীর্ষ পাঁচে রয়েছে জাপান। যুদ্ধে প্রস্তুত জাপানি সেনাসংখ্যা ২ লাখ ৪৭ হাজার ১৬০। শত্রু উত্তর কোরিয়ার থেকে সেনাসংখ্যার নিরিখে সামান্য এগিয়ে জাপান। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারে আধুনিক অস্ত্রভা-ারের তুলনায় জাপান অনেকটাই ভালো স্থানে। জাপানের ২০২০ সালে প্রতিরক্ষা বাজেট ৪ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। টোকিওর কাছে রয়েছে ১৫২ স্পেশাল মিশন এয়ারক্র্যাফট। প্রসঙ্গত, মার্কিনিদের ছাড়া এই পরিমাণ এয়ারক্র্যাফট অন্য কোনো দেশের কাছে নেই। জাপানি বিমানবাহিনীর রয়েছে ২৭৯টি জঙ্গি বিমান, ১২টি সাঁজোয়া বিমান, ৬০টি পরিবহন বিমান, ৪২৭টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৬৩৭টি হেলিকপ্টার এবং ১১৯টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার। জাপানি সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে ১ হাজার ৪টি ট্যাংক, ৩ হাজার ১৩০ সাঁজোয়া গাড়ি। জাপানি নৌবাহিনীর কাছে রয়েছে ৪টি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ৪০টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, ৬টি কারভেটিস ও ২০টি সাবমেরিন।
Leave a Reply