মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আগামীকাল সোমবার সমাহিত করা হবে প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীকে। আলাউদ্দিন আলীর জামাতা কাজী ফায়সাল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সোমবার বাদ জোহর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আলাউদ্দিন আলীর আবাসস্থল খিলগাঁওয়ের নূর-ই-বাগ মসজিদে। সেখান থেকে মিডিয়ার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা আড়াইটার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে বিএফডিসিতে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। তাকে সমাহিত করা হবে সেখানেই।
কাজী ফায়সাল আহমেদ আরও জানান, কাল জোহর নামাজ পর্যন্ত মরদেহ রাখা হবে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।
আজ বিকেল ৫টা ৫০মিনিটে রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি….রাজিউন)। আলাউদ্দিন আলীর মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিন ও ঘনিষ্ঠজন মোমিন বিশ্বাস।
এর আগে, গতকাল শনিবার ভোরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ও তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকায় লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সংগীত পরিচালক হিসেবে সাতবার এবং গীতিকার হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জাবেদ আলী ও মাতার নাম জোহরা খাতুন। আলাউদ্দিন তার পিতা ওস্তাদ জাবেদ আলী ও ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে প্রথম সঙ্গীতে শিক্ষা নেন। ১৯৬৮ সালে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে আসেন এবং আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজ সহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
সংগীত জীবন
আলাউদ্দিন ১৯৭৫ সালে সঙ্গীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন। তিনি গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), সুন্দরী (১৯৮০), কসাই এবং যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন।
জনপ্রিয় গান
একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়, হয় যদি বদনাম হোক আরও, আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার, সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি, সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না, যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে, এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়, সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে, আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা, শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে, কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না, পারি না ভুলে যেতে, স্মৃতিরা মালা গেঁথে জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে, হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ।
ব্যক্তিগত জীবন
তিনি নজরুল সংগীতশিল্পী সালমা সুলতানাকে (মৃত্যু ২০১৬) বিয়ে করেন। তাদের মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিন একজন সংগীতশিল্পী।
Leave a Reply