আগৈলঝাড়া প্রতিবেদক ॥ খেটে খাওয়া ঘনবসতিপূণ বসবাস ও শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে পরা বরিশাল জেলা আগৈলঝাড়া উপজেলার গ্রামটির নাম মোহনকাঠী । বর্তমানে ওই গ্রামকে সবাই একনামে এখন “আগৈলঝাড়ার চাই পল্লী” বা (মাছ মারা ফাঁদ) নামেই পরিচয়ে পরিচিত। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে ওই গ্রামের প্রায় ৪শত পরিবার এখনও বংশ পরস্পরায় চাই তৈরির পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। চাই তৈরির প্রধান উপকরন বাঁশ, বেঁত ও লতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অর্থাভাবে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন ও বিভিন্ন এনজিও কিংবা গ্রাম্যসুদি মহাজনদের কাছ থেকে টাকা এনে এ ব্যবসা করছেন।
এ কুটির শিল্প ‘চাই পল্লীটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারি ভাবে সহজ শর্তে ঋণ বিতরন করা হলে এ পল্লীর শ্রমজীবিরা তাদের দীর্ঘদিনের পেশাকে টিকিয়ে রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে চাই তৈরি করছেন সচীন বৈরাগী(৬০)। তিনি জানান, তার পিতা, ঠাকুর দাদা সহ তাদের পূর্বের পুরুষরা এ চাই তৈরির পেশায় ছিলেন। চাই তৈরির প্রধান উপকরন হচ্ছে তলা বাঁশ, বেঁত ও কৈয়া লতা। বতর্মানে বেঁত দুস্পাপ্র হওয়ায় বাঁশ ও লতা দিয়েই চাই তৈরি করা হয়। কুয়াকাটা, চট্টগ্রাম, কাপ্তাইসহ পাহারী অঞ্চল থেকে পাইকাররা কৈয়া লতা ক্রয় করে আনেন। তাদের কাছ থেকে কাফা (একমুঠ) তিনশত থেকে সাড়ে চারশত টাকায় ক্রয় করা হয়।
তারা আরো জানান, পানি বৃদ্ধি হওয়ায় বর্তমানে চাইয়ের কদর বেড়ে গেছে। দু’শত টাকার তলা বাঁশ, আড়াইশত টাকার কৈয়ালতা দিয়ে একেক জন শ্রমিক ৫দিনে এককুড়ি চাই তৈরি করতে পারেন। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন আনার ফলে তাদের কাছে প্রতি কুড়ি চাই পাইকারী হিসেবে বিক্রি করা হয় ৫হাজার থেকে ৬হাজার টাকায়। বাজারে যার দাম ১০হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এছাড়াও উপজেলার বারপাইকা গ্রামেও শতাধিক পরিবার রয়েছে যারা চাই তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
বর্তমানে সরকারী পৃষ্টপোষকতা না থাকায় অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়। তৈরিকৃত এসব চাই স্থানীয় মাহিলাড়া, পয়সারহাট, বাশাইল, সাহেবেরহাট, ধামুরাসহ বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠী, ঘাঘর, শশীকর, নবগ্রাম, পটুয়াখালী, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। চাই পল্লীর বাসিন্দারা এ হস্তশিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ভাবে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার জন্য দাবী করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কুটিরশিল্প ‘চাই পল্লীটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ রইচ সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের বলেন, এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলকে সহায়তা করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবেন।
Leave a Reply