বরগুনা প্রতিবেদক ॥ বরগুনার বেতাগীতে বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।এতে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে এসব মানুষ চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে। স্থানীয়রা জানায়, ঘূর্ণিঝড় বর্ষাকালে একটানা প্রবল বর্ষণ এবং অমাবশ্যা ও পূণির্মার সময় জোয়াড়ে পানি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পৌর শহরের বিষখালী নদীর পশ্চিম দিকে শৌলজালিয়া এলাকায় ছৈলার চর নামক একটি নতুন চর জেগে ওঠায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে পূর্ব পাড়ে বেতাগীর পৌর শহর এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দিন দিন অব্যাহত ভাঙনে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিষখালী নদীর পূর্ববর্তী এলাকায় দেড় শ বছরের আগের বেতাগী বন্দর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দক্ষিণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠবাজার, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শত বছর পুরোনো কালি মন্দির, শ্মশানগাট, অতিথিদের থাকার ডাব বাংলো, ঝোপখালী গ্রাম, পুরাতন থানা পাড়া, কেওড়াবুনিয়াসহ বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে ১৫ হাজার পরিবার। ৩ কিলোমিটারব্যাপী ভাঙনের কবলে পাল্টে যাচ্ছে বেতাগীর মানচিত্র। ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিষখালী নদীর পশ্চিম দিকে ঝালকাঠী জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলা, পূর্বদিকে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা অবস্থিত। উত্তরে ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদী ও বরিশালের কীর্ত্তনখোলা নদী প্রবাহমান। দক্ষিনে বলেশ্বর নদী ও বঙ্গোপসাগরের সাথে প্রবাহিত। নদীর ¯্রােত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরোনো থানা পাড়ার বিপরীত দিকে চর জেগে উঠায় নদীর ¯্রােত পরিবর্তিত হয়ে পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারনে ভেঙে যাচ্ছে বেতাগীর এ জনপদ। কাঠবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও দোকান মালিক অধ্যক্ষ মো. রফিকুল আমিন বলেন,‘ সরকারের বন্দর রক্ষা তথা কাঠবাজার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তা না হলে নদী যেভাবে ভেঙে যাচ্ছে ২/১ বছরের মধ্যে কাঠবাজারের অস্তিত্বই থাকবে না।’ শত বছরের পুরোনো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী কালি মন্দির আর কিছুদিনের মধ্যে বিষখালী নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বন্দর ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মি. পরেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন,‘ বেতাগী বন্দর অতি পুরাতন। এ বন্দরের কালীমন্দির, শ্মাশানঘাট রক্ষার জন্য সরকারের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান বলেন,‘ আমরা অরক্ষিত অবস্থায় আছি। সরকার যদি বর্ষা মৌসুমের মধ্যে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয় তবে বেতাগীর অস্থিত্ব হারিয়ে যাবে।’ এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বলেন,‘ বিষখালী নদীর ভাঙন সর্ম্পকে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি।’ এ বিষয় মোবাইল ফোনে বরগুনা পানি উন্নয়নবোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. কাওছার হোসেন বলেন,‘ আমরা বিষখালীর নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা সম্পর্কে ডিজাইন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি এবং প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। কাজের পরিকল্পনা সর্ম্পকে একনেকে সভা করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিলে কাজ করা সম্ভব হবে।’ বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম গত ১৪ জুন ২০১৯ খ্রি. তারিখ বেতাগীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরির্দশন করে বলেন,‘ বেতাগী পৌর শহরসহ বিষখালীর অব্যাহত ভাঙনকবলিত এলাকা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Leave a Reply