দখিনের খবর : প্রচলিত একটি কথা আছে; আইন হচ্ছে গরিবের জন্য মাকড়সার জাল, আর ধনীদের জন্য মুক্ত আকাশ! এ কথার সাথে অনেকে একমত পোষণ করলেও ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামের কারণে বরিশাল রেঞ্জের চিত্রটা এখন অনেকটা ভিন্ন। নিকষ কালো গাঢ় অন্ধকারে আলোর মশাল হাতে যিনি সব সময় কৃতিত্বের সাথে সমালোচনার উর্ধ্বে থেকেছেন। যোগ্যতা ও ব্যতিক্রমী চিন্তা-চেতনার এই পুলিশ কর্মকর্তা সেবা, সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বিপিএম, পিপিএম পদকও।
জানা গেছে, গত বছর ২৬ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশের মাধ্যমে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি পদে দায়িত্ব পান মো. শফিকুল ইসলাম। বরিশাল রেঞ্জে তার যোগদানের পর ৭ মাসেই পাল্টে যায় পুলিশের চিত্র। পুলিশ শাসক নয়, শোষক নয়; পুলিশ জনগণের সেবক। এই মন্ত্রে উজ্জীবিত এখন পুরো বরিশাল রেঞ্জের পুলিশের সকল সদস্য। শক্তি বা বল প্রয়োগে নয় বরং ভালোবাসার বার্তা দিয়ে সমাজ থেকে অপরাধের অন্ধকার দূরে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। বরিশাল রেঞ্জে যোগদানের পর আগুনঝরা দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘বরিশাল বিভাগে আমি থাকব, না হয় মাদক ব্যবসায়িরা থাকবে।’ তার এই বক্তব্যটি ফেসবুক, অনলাইন, প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বিভাগ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ডিআইজির এমন ঘোষণার পর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্রায় ৬ শতাধিক মাদকসেবী ও ব্যবসায়ি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করে। চিহ্নিত অনেক মাদক ব্যবসায়ি গা ঢাকা দিয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন সংশ্লিষ্টদের অধিকাংশই। একইসাথে বন্ধ হয়ে গেছে চিহ্নিত মাদকের স্পটগুলো। স্থানীয় সচেতন মহল মাদকের বিরুদ্ধে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামের এমন কঠোর অবস্থান ও জিরো টলারেন্সকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত ও সচ্ছল ছয় সন্তানের মায়া-মমতা, ভালোবাসা ও আদরবঞ্চিত ভিক্ষুক মা মনোয়ারা বেগমের (৭০) প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এই নিরহংকার মানুষটি। হাসপাতালে ওই ভিক্ষুক মাকে দেখতে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা দেন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করেন ডিআইজি। এছাড়াও বরিশাল রেঞ্জে যোগদানের পর গত আগস্ট মাসে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব দূর করতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জনবান্ধব পুলিশিং কার্যক্রম চালু করেন। বিট পুলিশিং ও উঠান বৈঠক তার সর্বশেষ সংযোজন। উদ্দেশ্য আরও জনসম্পৃক্ত হওয়া। জনগণের অংশগ্রহণে সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে জননিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা ও সামাজিক সমস্যাসমূহ অবগত হওয়া ও সমাধানের পথ বাতলানো। স্থানীয়দের কাছে বিষয়টি নতুন মনে হলেও এই জনবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে রেঞ্জের সকল থানাগুলোতে এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯১ সালে সহকারি পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের পর এই কর্মবীর সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ইতিহাস তৈরি করেছেন। ২০০৩ সালের মার্চ মাসে তিনি পুলিশ সুপার, ২০১২ সালের জুন মাসে অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান।
বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডিআইজি শফিকুল ইসলাম দক্ষ তদারকিতে মাঠপর্যায়ে সদস্যদের মাঝেও পেশাদারিত্ব এসেছে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ লাঘবে ডিআইজির বিচক্ষণতা অনেকাংশেই প্রশংসার দাবি রাখে। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম (বিপিএম, পিপিএম) বলেন, বিট পুলিশিংয়ে মানুষের আস্থা বেড়েছে। আপামর জনগণের বা তৃণমূলের মানুষের মতামত, বুদ্ধি, যুক্তি, তথ্য, সম্পৃক্ততা, সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব ও অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আইন-শৃঙ্খলা ও সামাজিক সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভবপর। পুলিশকে জনগণের কাছাকাছি যেতে হবে, জনগণের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রেঞ্জের আওতাধীন জেলা ও থানা ইউনিটগুলোতে আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও অধিকতর পুলিশি সেবা দিতে বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে চলমান টেকসই আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নকে ধরে রাখা সম্ভব হবে।
Leave a Reply