নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গোপন বিয়ে বা প্রেমের নামে অনৈতিক সম্পর্কের পরে সেই সম্পর্ক অস্বীকারের ঘটনা প্রায় শোনা যাচ্ছে। তবে এবার ঘটেছে নতুন ঘটনা। রাজনৈতিক দলের পদ পেতে এবার স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন এক ছাত্রদল নেতা। বিয়ে করার বিষয়টি পুরো গোপন করে তিনি হতে হচ্ছেন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি। বিরল এই ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলায়। এ নিয়ে শুধু সামাজিক মহলেই নয়, বরং রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং সমালচনার ঝড় উঠেছে। জানাগেছে, ‘সম্প্রতি বরিশাল জেলা ছাত্রদলের অধিনস্ত ৪০টি ইউনিটের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় বৈঠক শেষে ১০ উপজেলা, ৬ পৌরসভা এবং ২৪টি কলেজ শাখার আংশিক কমিটি চুড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এরি মধ্যে পদ পেতে আবেদন করেছেন অনেক প্রত্যাশী ছাত্র নেতা।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, ‘ইউনিট কমিটি গঠনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ রোড ম্যাপ এঁকে দিয়েছেন। যা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি এবং জেলার নেতৃৃবৃন্দকে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী বিবাহিত, অছাত্র এবং বিতর্কিতরা কমিটিতে আসতে পারবেন না। তাছাড়া যারা ২০০৪ সালের পরে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন শুধুমাত্র তারাই কমিটিতে আসতে পারবেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশালের হিজলা উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ পেতে আবেদন করেছেন মহাসিন সিকদার নামের এক ছাত্র নেতা। পদ পেতে করা আবেদনে তিনি তার বিয়ের কথ্য গোপন করেছেন। এমনকি তিনি অবিবাহিত বলেও দাবি করেছেন। অনুসন্ধানে জানাগেছে, মহসিন সিকদার ২০১৪ সালে বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রীর নাম মোসা: আইরিন বেগম। সে হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক ঘরামী ও মোসা: নিলুফা বেগম দম্পতির মেয়ে। তারা স্বামী-স্ত্রী বর্তমানে ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসবাস করছেন।
এদিকে শুধু বিয়ের তথ্যই গোপন করেননি তিনি। শিক্ষাগত তথ্যও গোপন করেছেন মহাসিন সিকদার। তিনি ২০০৪ সালে এসএসসি এবং ২০০৬ সালে এইচএসসি পাশ করেছেন। যা মহসিন সিকদারের নিজ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকগন লিখিত আকারে জেলা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে অবহিত করেছেন। এছাড়াও মহসিন সিকদার বিগত দিন যাদের সাথে ছাত্রদলের বিভিন্ন পদে আসার প্রতিযোগিতায় ছিলেন সেরকম প্রায় একডজন নেতাও “রোড ম্যাপের কারণে পদ থেকে ছিটকে পড়া” মহসিনের বিয়ে এবং এসএসসি উত্তীর্ণের তথ্য উল্লেখ করে শর্ত অমান্য করে মহসিনের বায়োডাটা জমা দেওয়ার বিষয়টি জেলা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে লিখিত আকারে জানিয়েছেন। স্থানীয় এবং বিশ্বস্থ সূত্র জানিয়েছে, ‘কমিটি গঠনের গুঞ্জন শুরুর পর পরই গত দুই মাস পূর্বে মহসিন তার স্ত্রী আইরিন বেগমকে ঢাকার সাভারে পাঠিয়ে দেন। যা এলাকার সকলে অবহিত থাকলেও জেলা ছাত্রদল কিছুই জানেন না বলে হিজলা বিএনপি নেতাদেরকে জানান। তাদের ভাষ্য, মহসিন বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রীকে আমাদেরকে দেখানো হোক! নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল বিএনপির এক নেতা আক্ষেপ করে বলেন, কমিটি গঠন ক্ষেত্রে ছাত্রদলের নেতাদের পেছনে বিএনপির সিনিয়র নেতাকেও ঘুরতে হচ্ছে। ওইসব জুনিয়ররাও বিষয়টি বেশ উপভোগ করছে। তাদের কোনো কথা বললে ‘ভাইয়ার’ নির্দেশনা বা কেন্দ্রের রোড ম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছেন বলে মুখের ওপর বলে দেন।
এভাবে চলতে থাকলে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে- যা দলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনবে। কেউ কেউ মানসম্মানের কথা চিন্তা করে চুপ রয়েছেন। তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই বলে জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি মনে করেন দলের কমিটি গঠনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সিনিয়র নেতাদের মতামত নিয়েই কমিটি গঠন করা উচিত।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজ আলম মিঠু এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসানের মোবাইলে কল করা হলে তারা কমিটি গঠন পক্রিয়ায় ঢাকায় মিটিংয়ে আছেন বলে কথা বলা যায়নি। এদিকে মহসিন সিকদারকে বিয়ে করেছেন কি না জানতে চাইলে অস্বীকার না করলেও প্রতিবেদককে বাড়ী এসে স্ত্রী খুঁজে বের করার আহবান জানান। স্থানীয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা নেতারা আপনার বিয়ের কথা উল্লেখ করে যে লিখিত দিয়েছে; তা কি মিথ্যা এমন প্রশ্ন করা হলে ফোনের লাইনটি কেটে দেন ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশী মহসিন সিকদার।
Looks great from a distance. very stylish. On closer inspection you can see that its not expensive