উজিরপুর প্রতিবেদক ॥ একদিকে ভাঙ্গছে জনপদ। পেরিয়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়। নদী শাসনের জন্য সরকার নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবী করেছেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদাসীনতায় কোন কাজই এগিয়ে নিচ্ছেন না। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় নদী ভাঙ্গন রোধে সন্ধ্যা নদীর শাখা লস্করপুর-বড়াকোঠা খালে পানি উন্নয়ন বোর্ড গৃহিত ১২ কোটি টাকা ব্যায়ে সন্ধ্যা নদী শাসনকল্পে ড্রেজিং প্রকল্পে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ড্রেজিংয়ে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যান্ত্রীক ত্রুটির অযুহাত দেখিয়ে ইতিমধ্যে একবছর মেয়াদী প্রকল্পের সময় শেষ করে ফেলেছেন। যদিও তারা দাবী করেছেন বরাদ্দের টাকা না আসায় কাজ এগিয়ে নিতে পারছেন না। তা আবার মানতে নারাজ স্থানীয়রা।
জানা গেছে, সরকারি ড্রেজার যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে থেমে থাকলেও অসাধু কিছু ব্যক্তির ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন চলছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দিপক রঞ্জন দাস বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
অসাধু বালু উত্তোলনকারীদের ড্রেজার
উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নদীর শাখা খালগুলোর নাব্য ধরে রাখতে না পারায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারনে ইতিমধ্যে শতকোটি টাকার সম্পত্তি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি জানান, কয়েক বছরে কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীতে হারিয়ে গেছে। যেখানে হাট-বাজার ছিল তাও আজ নদীর মধ্যে। এভাবে চলতে থাকলে উজিরপুর উপজেলা নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। বর্তমানে উপজেলার চথলবাড়ি মডেল বাজার, ৩ তলা বিশিষ্ট আব্দুল মজিদ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চথলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইতলা বিশিষ্ট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পোস্ট অফিস, নারিকেলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ, নবনির্মিত উজিরপুর-সাতলা সড়কসহ রয়েছে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে। বড়াকোঠা ইউনিয়নের লস্করপুর-বড়াকোঠা খালে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং প্রকল্পের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলম।প্রকল্প মেয়াদে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ড্রেজিং কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক তৃতীয়াংশ কাজও এখনো শেষ হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, উজিরপুরে ড্রেজিং কাজ পরিচালনাকারীর বিরুদ্ধে বালু বিক্রির অভিযোগও এসেছে। খনন কার্যে নিয়োজিত ড্রেজার ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০ মিটার প্রস্থ খনন কাজ শেষের পথে। মূলত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, এক বছরে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২০০ মিটার প্রস্থ নদী ড্রেজিংয়ের নির্দেশনা ছিল। যদিও বরাদ্দ সময়মত পাননি বলে দাবী করেছেন ড্রেজিংয়ের দ্বায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুস ছালাম ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম নবী। তারা জানান, এক বছরে মাত্র দুইকোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। অথচ নির্ধারিত প্রকল্প শেষ করতে দরকার ১২ কোটি টাকা। বড়াকোঠা ইউনিয়ন সদস্য হারুন অর রশিদ জানান, ড্রেজিং বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে উদাসীনতার কারনে লস্করপুর-বড়াকোঠা খালের খনন হচ্ছে না। যে কারনে সন্ধ্যার পানি প্রবাহে ব্যহত হচ্ছে। চলাচলে ব্যহত হওয়া পানির কারনে উজিরপুরের মানচিত্র দিনদিন বদলে যাচ্ছে। তার দাবী, নদী ভাঙ্গনে মানুষ উন্মুল হয়ে যাচ্ছেন। সব হারিয়ে শহরে গিয়ে বস্তিতে বসবাস শুরু করছেন, সেই খেয়াল নেই ড্রেজিং বিভাগের। প্রকল্প এসেছে, ড্রেজার এনে রেখেছে। আমরা বড় বড় ড্রেজার দেখে শান্তি পাচ্ছি। কিন্তু লস্করপুর খাল খননের কোন অগ্রগতি দেখছি না।
Leave a Reply