বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কারাগারে আজ একমাস পূর্ণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদন্ড মাথায় নিয়ে গত ৮ ফেব্র“য়ারি রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যাক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন তিনি। সেই থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি। গত এক মাসে তার বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর, ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতিমাসহ পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন।
এর বাইরে আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন,এডভোকেট আবদুর রেজাক খান ও ব্যারিস্টার এজে মোহাম্মদ আলী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান। তবে বিএনপি মহাসচিবসহ অন্য সিনিয়র নেতারা সে সুযোগ পাননি। অবশেষে গতকাল বুধবার বিকেল সোয়া ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট দলের স্থায়ী কমিটির ৭ সদস্য ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব কারা অভ্যন্তরে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। খালেদা জিয়া কারা ভবনের ডে-কেয়ার সেন্টারের ২য় তলার একটি সেলে রয়েছেন। সেখানে তিনি ভালো আছেন, অটুট আছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের অভিযোগ, খালেদা জিয়া কারাগারে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার পাঁচটি রোগ আছে বলে দাবি করেন। যদিও কারা কর্তৃপক্ষের দাবি একজন চিকিৎসক ও একজন ফার্মাসিস্ট তার নিয়মিত দেখা শোনা করছেন। এর বাইরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আদালতের নির্দেশে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমাও রয়েছেন। অবশ্য খাবার-দাবার নিয়েও কোনও অভিযোগ নেই খালেদা জিয়ার। কারা কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা খাবারই তিনি খাচ্ছেন। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ২ জন ডেপুটি জেলার ও ৪ জন কারারক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। রাজনীতিতে পা দিয়েই এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে কয়েক দফা গ্রেপ্তার হন খালেদা জিয়া। ২০০৭ সালে এক-এগারো সরকারের সময়ও এক বছরের বেশি সময় কারারুদ্ধ ছিলেন তিনি। তখন অবশ্য জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার একটি বাড়ীকে তার জন্য সাবজেল ঘোষণা করা হয়। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে। পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচি পালনে দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের অংশ নেয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে মামলার নথিপত্র আগামী রোববার হাই কোর্টে পাঠানো হবে বলে বিচারিক আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন গতকাল বুধবার জানিয়েছেন। যে নথি পাওয়ার ওপর খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশ নির্ভর করছে। গত ৮ ফেব্র“য়ারি ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায় দেয়ার ১০ দিন পর সত্যায়িত অনুলিপি পেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। সঙ্গে জামিনের আবেদনও জানান। ২২ ফেব্র“য়ারি হাই কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জরিমানা স্থগিত করেন। জজ আদালত থেকে এ মামলার নথি এলে তা দেখে আদেশ দেবেন বলে জানান তারা। অবশ্য এরই মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে পূর্ণাঙ্গ রায়ের নথি পাঠাতেও গড়িমসি চলছে বলে বিএনপি নেতারা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অভিযোগ করে আসছেন। বিএনপি নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়াকে বেশি দিন কারাগারে আটকে রাখতেই এই কৌশল নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের আইনজীবীদের ভুলের কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাবাস দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
Leave a Reply