নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সাধারণ মানুষকে এক প্রকার জিম্মি বানিয়ে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন নগরীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আশপাশের অখ্যাত খাবার হোটেলগুলো। সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন তথ্যের সত্যতা মিলেছে। সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এক শ্রেণির হোটেল ব্যবসায়ী বাড়তি দামে বিক্রি করছেন খাদ্যদ্রব্য। প্রায় সবধরনের খাবারেই বাড়তি দাম নেয়া হয় অপরিচ্ছন্ন-অখ্যাত ছোট ছোট এসব হোটেলে। নগরীর শেরে বাংলা ও সদর হাসপাতাল, ইসলামী হাসপাতাল, রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল, ফেয়ার, পলি, ইডেন, মেডিনোভা, অ্যাপোলো, ল্যাবএইড ক্লিনিকসহ সদর রোডে অবস্থিত প্রায় সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংলগ্ন ও আশপাশের এলাকায় অবস্থিত এসব ছোট ছোট খাবার হোটেলে নামিদামী খাবার হোটেলের তুলনায় প্রতিটি খাদ্যপণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে। যদিও খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যবসায়ীরা কৌশলে ফায়দা ঠিকই লুটছে।
এরই ধারাবাহিকতায় নগরীর নথুল্লাবাদ কস্তুরী রেস্তোরাঁয় ফের জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় প্রতিষ্ঠানটিকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক শাহ্ মোহাম্মদ শোয়াইব মিয়ার নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
গত ১ জুলাই মেয়াদ উত্তীর্ণ কোমল পানীয় পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন নয় ক্রেতা। এ ঘটনায় আব্বাস নামের এক ক্রেতা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কস্তুরী রেস্তোরাঁকে জরিমানা করা হয়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এক প্রকার জিম্মি করে পকেট কাটা হচ্ছে তাদের। নগরীর বিভিন্ন এলাকার হোটেলের চেয়ে ওইসব হোটেলে খাদ্যদ্রব্যের দাম ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরেবাংলা হাসপাতাল, অ্যাপোলো ক্লিনিক, ইসলামী হাসপাতাল, ল্যাবএইড সংলগ্ন খাবার হোটেলগুলোয় আকার ও মানভেদে তেলাপিয়া মাছ ৬০-৮০ টাকায়, গরুর মাংসের ৩/৪টি ছোট টুকরা ৮০-১২০ টাকায়, সবজি প্রতি প্লেট ৩০-৪০, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা ১০-৩০, খাসীর মাংসের প্লেট ১৫০-১৮০ ও মুরগীর মাংস প্লেট প্রতি ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনুরূপভাবে স্থান ও প্রকারভেদে অন্যান্য চিকিৎসাসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশের অখ্যাত খাবার হোটেলগুলো বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা বিভিন্ন জেলা-উপজেলার রোগী ও তাদের স্বজনরা। প্রতিবাদ করতে গেলে অযথা হয়রানির স্বীকার হতে হয়। বাড়তি দামের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বরাবরের মত খাদ্যপণ্য ও তৈরির উপকরণ বৃদ্ধির অজুহাত তুলছেন।
একাধিক খাবার হোটেল ব্যবসায়ী দাবি করেন, দ্রব্যমূল্যসহ আনুষঙ্গিক জিনিষপত্রের দামের সাথে সমন্বয় করে সামান্য লাভ রেখে খাদ্যদ্রব্যের দাম নিচ্ছেন তারা। তবে একাধিক ভোক্তা-ক্রেতা ব্যবসায়ীদের এমন বক্তব্য অবান্তর বলে অভিযোগ করেছেন। বাকেরগঞ্জ থেকে শেবাচিমে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীর স্বজন মো. আলম বলেন, নগরীর সুসজ্জিত অভিজাত হোটেলগুলো দেখে ভেবেছিলেন সেখানে খাবারের দাম বেশি হবে। তাই এক অখ্যাত হোটেলে খাবার খেতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে পড়েন বিপত্তিতে। কারণ সেই অখ্যাত হোটেলটিতে নামি হোটেলগুলোর তুলনায় দাম বেশি নেয়া হয় তার কাছ থেকে। আর এ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হন স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে অভিজাত এক খাবার হোটেলের মূল্য তালিকা দেখে। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারি এবং নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রনজিত দত্ত বলেন, অসাধু খাবার হোটেল ব্যবসায়ীরা কৌশলে ক্রেতা সাধারণের পকেট কাটছেন। ব্যবসায়ীদের অসাধু মনোভাবই খাদ্যদ্রব্যের বাড়তি মূল্য আদায়ের কারণ। এছাড়া মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়নেও সংশ্লিষ্টদের অনীহা রয়েছে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে বিষয়টি জেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভায় উত্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশালের উপপরিচালক সুমি রানী মিত্র বলেন, গ্রহীতাদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সঠিক অভিযোগের ভিত্তিতে তার আইনের সাহায্য নিচ্ছেন।
Leave a Reply